ইদ্রিস আলী বীর প্রতীক
চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ত ম সালেহ। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সুনামগঞ্জের চেনা মুখগুলো এক এক করে বিদায় নিয়ে না ফেরার দেশে যাচ্ছেন।
সুনামগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুল হক এম এন এ, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান ওবায়দুর রেজা এম এন এ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হেকিম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসু মিয়া চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবদুর রইছ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুজ জহুর, বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন বখত, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার বখত নেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুর রহিম এম বি বি এস, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আল আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলফাত উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী ইউনুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবুল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তালেবউদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার এম এ হালিম বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন উজির মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মুসাদ্দিক রেজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু সাধন ভদ্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামস উদ্দিন সহ হাজারো বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ আর নেই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রকণ্ঠের আহবানে সাড়া দিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বুকের তাজা রক্ত দান করে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আল্লাহর রহমতে বিশ্বখ্যাত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও পরিবারের সদস্যগণকে সম্মানিত করেছেন এবং স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।
আ ত ম সালেহ ভাইয়ের সাথে প্রথম পরিচয় একাত্তরের মে মাসের শেষ সপ্তাহে ডাউকিতে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ কল্পে ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আমরা প্রায় একশো তরুণ সেখানে সমবেত হয়েছিলাম। সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, দোয়ারাবাজার (ছাতক) ও ভোলাগঞ্জের মোট ৫ টি গ্রুপের সমন্বয়ে আমাদেরকে মেঘালয়ের জোয়াই হিলে স্থাপিত ইকো – ওয়ান ট্রেনিং সেন্টারে প্রথম ব্যাচে পাঠানো হয়। সেখানে আমাদের উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যাঞ্জক বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী এম এন এ এবং অ্যাডভোকেট আবদুল হক এম এন এ। ট্রেনিং সেন্টারে শুরু থেকেই সালেহ ভাই নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁর আচরণে আমরা মুগ্ধ হতাম। ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে আমাদেরকে ৩ ভাগে ভাগ করে বালাট, সেলা ও ভোলাগঞ্জ সাব সেক্টর ৩টিতে পাঠানো হয়। সালেহ ভাইকে ভোলাগঞ্জে এবং আমাকে সেলায় দায়িত্ব দেওয়ায় যুদ্ধকালে আর দেখা হয় নাই।
প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার অধিকারী আ ত ম সালেহ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভাবে ভিন্নতা থাকা সত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরকে সহযোগিতা করতেন। আমি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি থাকাকালীন সময়ে প্রতিটি আন্দোলনে তাঁর সরব সমর্থন পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের যে কোন প্রয়োজনে তিনি সর্বদা এগিয়ে এসেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কিত প্রতিটি সভা সমাবেশে তাঁর উপস্থিতি ছিল নিয়মিত। সর্বোপরি হাওর বাঁচাও – সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনে তাঁর সুস্পষ্ট ভূমিকা ছিল।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট একান্ত প্রার্থনা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ত ম সালেহ কে বেহেশত নসীব করুন এবং তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যগণকে ধৈর্য্য ধারণের তাওফিক দান করুন।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ
- অস্বস্তিকর বাঁধের কাজ/ মাটি থেকে যারা কড়ি আহরণে উন্মাদ তাদের প্রতিহত করুন
- অদম্য মেধাবী রীমার হাতে বই তুলে দিলেন সুহৃদের বন্ধুরা