শিলা বৃষ্টিতে শান্তিগঞ্জে কৃষকদের সর্বনাশ

ইয়াকুব শাহরিয়ার, শান্তিগঞ্জ
শান্তিগঞ্জে শিলা বৃষ্টিতে ধানের তোড় তেথলে বিপূল পরিমাণ বোর ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ধানের গোছার তোড় থেকে বের হওয়া ধান এখন চিটা (ধানে সার থাকবে না) হয়ে যাবার আশংকা করছেন কৃষকরা। রোববার রাতে উপজেলার কয়েকটি হাওরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের সঙ্গে শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ শিলা বৃষ্টিতে ১৫০ হেক্টর ধানের ক্ষতি হয়েছে দাবি করলেও, কৃষকরা বলেছেন ক্ষতির পরিমাণ তিন থেকে চারশ হেক্টর হবে।
রোববার রাত নয় টায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ববীরগাঁও, পশ্চিম বীরগাঁও, দরগাপাশা ও পাথারিয়া উপর দিয়ে প্রচ- বেগে ঝড় হতে থাকে। ঝড়ের সঙ্গে শিলা বৃষ্টিও শুরু হয়। প্রায় ১০ মিনিট ব্যাপী হওয়া শিলা বৃষ্টিতে উপজেলার খাই, সাংহাই, কাউয়াজুরি ও পাখিমারা হাওরের ধানের ক্ষতি করে।
খাই হাওরপাড়ের দুর্বাকান্দা গ্রামের কৃষক কামাল মিয়া বললেন, ‘তোড় থাকি খালি (কেবল) একটা দুইটা কইরা ধান বের অর (হচ্ছে), এই সময় হিলে (শিলা বৃষ্টি) মারছে। চাইরটা (চারটা) হিলে ১০০ গ্রাম ওজন অইবো (হবে)। এমন বড় হিলে তোড় ফাটাই (ফেটে যাওয়া) দিছে, পাতা ভাঙছে, এই তোড় দিয়ে বের হওয়া ধানে এখন আর সার থাকতো নায়, ছোছা (চিটা) অইজিব (হয়ে যাবে), মইরা মইরা (মরে) ধানের গোছা সাদা অইযার।’ তিনি জানালেন, তার এক এক একর জমির অর্ধেকই নষ্ট হয়ে গেছে। এই কৃষক মনে করেন, এক রাতেই তিন থেকে চারশ হেক্টর জমির ধান শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একই হাওরপাড়ের জয়সিদ্ধি গ্রামের কৃষক বুল বুল আমিন বললেন, ২০ কেয়ার (সাত একর) জমি করছিলেন, তিন কেয়ার জমির ধানের ছড়া ভেঙে গেছে। এই ধানে আর ফল পাওয়া যাবে না।
পাখিমারা হাওরপাড়ের বীরগাঁওয়ের কৃষক শিপাউর রহমান বললেন, ১০ কেয়ার জমিনে ২৮ জাতের ধান রোপন করেছিলাম। ধান পাকা শুরু হয়েছিল। চৈত্র মাসের ২০ তারিখ ধান কেটে ফেলতে পারতাম। রাতের শিলাবৃষ্টিতে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
একই ইউনিয়নের সলফ (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা কৃষক উকিল আলী বললেন, জামখলার হাওরে আগামী সপ্তাহে ধান কাটা শুরু হতো। এরমধ্যেই এমন সর্বনাশ। তিনি জানালেন, বীরগাঁও, দরগাপাশা ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের পাখিমারা, পিঁপড়াকান্দি, শল্যারদাইড়, বাঁচাডুবি ও দক্ষিণের হাওরসহ প্রায় সব হাওরেই কৃষকের কম বেশি ক্ষতি করেছে শিলাবৃষ্টি। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নয়। সকালে ক্ষেতের পাশে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাঁচাডুবি হাওর পাড়ের কৃষক আবদুর রহমান জানান, সময় মতো বৃষ্টি পেয়ে ভালো ফলন হয়েছিল। ধানের গোছাভর্তি ফুল এসেছিলো। কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টি হয়ে অঙ্কুরেই সব জমি নষ্ট করে দিয়েছে। এই কষ্ট কীভাবে সহ্য করবো?
পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান জায়গীরদার খোকন বললেন, সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় এবার তার ইউনিয়নের সব কয়টি হাওরেই ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু শিলা বৃষ্টিতে শতকরা ২৫ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষকদের সরকারিভাবে সহযোগিতা দেবার দাবি জানালেন।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বললেন, শিলা বৃষ্টিতে কমপক্ষে দুই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন সময় ধানের ক্ষতি হয়েছে। এই ধানের গাছে আর কোন কাজে আসবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত জমির ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। তবে ৭২ ঘণ্টা যাবার পর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত মনে হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ ১৫০ হেক্টর হবে।