ব্যক্তির সৃজনশীলতা ও সাহসী উদ্যোগ তাকে একসময় সফলতার সন্ধান দেয়, কথাটি আবারও বুঝা গেল জামালগঞ্জের রেজাউল বশিরের কাহিনী শুনে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কামলাবাজ গ্রামের ব্যক্তি তিনি। নিজের কৈশোরকালের ভালোবাসার বিষয়কে এখন সফল ব্যবসায়িক কর্মকা-ে পরিণত করেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন একটি দেশি-বিদেশী পাখির খামার। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে তাকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সুনামগঞ্জের খবর এ ধরনের সফল উদ্যোক্তাদের বিশেষ অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে জনসমক্ষে উপস্থাপন করে এ কারণে যে, তাঁদের সফলতা দেখে যাতে আরও বহু মানুষ উৎসাহ পায়। নিজেকে সংকীর্ণ গ-ির বাইরে নিয়ে নিজে নিজেই গড়ে তুলতে পারে সমৃদ্ধ এক জগৎ। তবে এজন্য ব্যক্তির ভিতর থাকতে হবে স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা, দক্ষতা, সাহস; সর্বোপরি যৌক্তিক উদ্যোগ। অনেকেই এখন এরকম উদ্যোগের কারণে নিজেকে অন্যরকম গৌরবের পরিচয়ে পরিচিত করতে পেরেছেন। জামালগঞ্জের রেজাউল বশিরও এমন এক সফল ব্যক্তি। ছোটবেলায় পাখি ভালোবাসতেন। এখান ওখান থেকে পাখির বাচ্চা এনে পোষতেন। একসময় তিনি গড়ে তুলেন হাঁস ও মুরগের খামার। এক পর্যায়ে ছোটবেলার শখ পূরণে এগিয়ে আসেন। সংগ্রহ করেন নানা জাতের বিদেশি জাতের পাখির ছানা। নিজের ঘরের ছাদে দুইটি ঘরের একটিতে কবুতর ও অন্যটিতে বিদেশি পাখি পালন করছেন তিনি। কবুতর ছাড়া বিদেশি জাতের মধ্যে রয়েছে কিংস, লাভবার্ড, ঘুঘু প্রভৃতি। এসব পাখি বেশ দামেও বিক্রি করতে পারছেন তিনি। সংবাদভাষ্য অনুসারে জানা যায়, প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকার জনৈক আব্দুর রহমান এসেছেন বশিরের বাড়িতে পাখি কিনতে। তিনি সেদিন ২০ জোড়া লাভবার্ড কিনেছেন প্রতি জোড়া ৬ হাজার টাকা দামে। উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশি নানা জাতের পাখি চাষ করে এখন প্রচুর আয় করার সুযোগ রয়েছে।
মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে নানা ধরনের শখ। এর মধ্যে পাখি পালন একটি অন্যতম শখ বিবেচনা করা হয়। বহু শৌখিন ব্যক্তি এখন পাখি পালেন। এই চাহিদার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশে ভাল পাখির বাজার গড়ে উঠেছে। ঢাকার নীলক্ষেত্রে গেলে বড় পাখির বাজার দেখা যায়। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পাখির বাজারটি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে চাহিদা মিটানোর সক্ষমতার জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। অবৈধ পন্থায় সংগ্রহ করা পাখি বা জন্তু জানোয়ার বিক্রি হয়ে থাকে এসব বাজারে। একটু সচেষ্ট হলেই এই বাজারটি বৈধ ভাবে পরিচালনা করার সুযোগ করে নেয়া যায়। জামালগঞ্জের রেজাউল বশির ছোট আকারে সেই চেষ্টা শুরু করেছেন। আমাদের বিশ্বাস এই ধরনের উদ্যোগের আরও সম্প্রসারণ ঘটবে।
বর্তমানে তরুণ যুবকদের অনেকেই প্রথাগতভাবে সাধারণ মানের জীবন যাপন করার পরিবর্তে স্বাধীনভাবে নিজের পেশা গড়ে তুলতে চান। এরা চাকুরি কিংবা আটপৌঢ়ে জীবনের বাইরে ভিন্ন একটি জীবন বেছে নিতে পছন্দ করেন। তাই বিভিন্ন জায়গায় এরকম উদ্যোক্তা তরুণ তরুণীদের দ্বারা গড়ে উঠেছে মৎস্য, প্রাণীজ ও কৃষিজ খামার, কুঠিরশিল্প, বাণিজ্যিক ফুলের খামার, আরও নানা কিছু। এই প্রবণতা অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করছে। বাড়াচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকা-। বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতির জন্য এসব উদ্যোগ খুব তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের সীমিত চাকুরি বাজারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এসব ব্যক্তিগত উদ্যোগকে সরকার সবসময় পৃষ্ঠপোষকতা ও উৎসাহ দান করে। জামালগঞ্জের রেজাউল বশির বা এরকম অন্য সফল তরুণদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমরা চাই আরও বহু তরুণ এভাবে নিজেদের জীবন তৈরি করুন।
সফল পাখি খামারী রেজাউল বশিরকে আমাদের অভিনন্দন।
- সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শপথ গ্রহণ
- সেচ দিয়ে নদী শুকানোর পাঁয়তারা/ বোরো ফসল বিনষ্টের আশঙ্কা