সরকার এ বছরের আমন মৌসুমে ধান ও চাল ক্রয়ের কর্মসূচী ঘোষণা ও মূল্য নির্ধারণ করেছেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা ও চাল ৪২ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এই দর যথাক্রমে ১ টাকা ও ২ টাকা বেশি। মূদ্রার অবমূল্যায়ন, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, জীবন ধারণের ব্যয় বৃদ্ধি প্রভৃতি বিবেচনায় ধান ও চালের সরকার নির্ধারিত এই মূল্য কম বলেই মনে হয়। বাজারে ধান ও চালের দাম এর চাইতে অনেক বেশি। আমরা অনুমান করতে পারি, সংগ্রহ মৌসুমে বাজারে ধান ও চালের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি থাকতে পারে। খোলাবাজারে দাম বেশি হলে কেউ সরকারি গুদামে ধান-চাল দিতে চাইবেন না। এতে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।
উৎপাদন মৌসুমে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এ দেশের কৃষকদের চিরায়ত বঞ্চনার নাম। উৎপাদক কৃষকরা যখন ধান-চাল বিক্রি করেন তখন কারসাজির মাধ্যমে বাজারমূল্য কমিয়ে ফেলা হয়। ধান ও চালের বড় ক্রেতা মিলমালিক, ফড়িয়া ও মধ্যসত্ত্বভোগী সিন্ডিকেটের বাজার নিয়ন্ত্রণের শিকার হয়ে কৃষকরা অল্পমূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। কয়েক বছর আগে বাজারের এই অবস্থা ছিলো ভয়ানক। কৃষকরা তখন ধান উৎপাদন করতে যে খরচ হয় তার চাইতে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন। ক্রমাগত লোকসানের কারণে ধান উৎপাদন থেকে অনেক কৃষক বিমুখ হতে শুরু করেছিলেন। অবশ্য গত কয়েক বছর যাবত অবস্থার কিঞ্চিৎ উন্নতি ঘটেছে। তার পরেও কৃষকের গোলায় ধান মজুদকালীন বাজারে ধানের তুলনামূলক স্বল্পমূল্য থাকার বাস্তবতা এখনও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কৃষকের হাতে যখন মজুদ থাকে না তখন বাজারে ধান ও চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। এই জায়গায় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উপকরণ ছিল সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয় কর্মসূচী। সরকার ধান ও চালের উপযুক্ত মূল্য বেঁধে দিলে কৃষকদের যেমন ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয় তেমনি বাজার কারসাজি করার বিষয়টিও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে। কিন্তু সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহ অভিযানটি এখন কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়েছে।
সামনের বছর আন্তর্জাতিক নানা অভিঘাতে দেশে অভাব দেখা দিতে পারে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যে ভালো নেই বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে তা বেশ বুঝা যায়। রপ্তানি ও রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলমান ও সামনের এইসব দুরবস্থা মোকাবিলার জন্য জাতীয়ভাবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এর মাঝে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুদ গড়ে তোলা অন্যতম। শুধু খাদ্যের অভাব মোকাবিলা করা গেলে ওই ধরনের সংকটে একেবারে বিপর্যস্ত হওয়ার বাস্তবতাকে আটকানো সম্ভব হয়। কিন্তু সরকারি গতানুগতিক কর্মসূচীগুলো আমাদেরকে আশাহত করছে। এবার সরকারিভাবে খাদ্যের বিশাল মজুদ গড়ে তোলা দরকার ছিলো। এজন্য অপরাপর অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাতের খরচ কমিয়ে খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দেয়াই কাক্সিক্ষত ছিলো। কিন্তু চলতি আমন মৌসুমে সরকার ধান ও চাল সংগ্রহের যে কর্মসূচী ঘোষণা করলেন তা আগের বছরগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী নয়।
এখনও সময় আছে। সরকারিভাবে ধান ও চালের মূল্য আরেকটু বাড়িয়ে কীভাবে সরকারিভাবে ধান ও চালের নিরাপদ মজুদ গড়ে তোলা যায় সেজন্য জরুরিভাবে চিন্তা করার জন্য আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
- কিশোর গংয়ের দ্বন্দ্বে আহত ৪, গ্রেপ্তার ১
- জামালগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সংঘ