সেই বাঁধে এখনও পড়েনি মাটি

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর
জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের ফসল রক্ষায় গেল বছর টানা একসপ্তাহ লড়াই করে একটি বেড়িবাঁধ রক্ষা করেছিলেন স্থানীয় এলাকাবাসি। কিন্তু সেই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এখনো কাজ শুরু হয়নি। ফলে উদ্বেগ উৎকষ্ঠা দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, গত বছর সময়মতো কাজ শুরু না হওয়াতে ঝুঁকিও পড়েছিল হাওর। এবারও প্রায় দুই মাস হয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে কাজ শুরু হয়নি।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া কামারখালী নদীর তীরে অবস্থিত হামহামির বেড়িবাঁধের একাংশে কাজ শুরু হলেও বাঁধের ক্লোজারে (ভাঙা গর্ত) এক দলা মাটিও পড়েনি। বাঁধের এই স্থানটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গেলবার এ স্থানে বারবার ফটলের ঘটনা ঘটেছিল।
এলাকাবাসি জানান, ২০২২ সালে ৪ এপ্রিল নলুয়া হাওরের পোল্ডার-১ এর আওতাধীন চার নম্বর প্রকল্পের ভুরাখালি গ্রামের নিকটবর্তী হামহামি বাঁধে ফাটা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধটি কোনভাবে রক্ষার চেষ্টা করেন। এখানেই শেষ নয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে বাঁধটি। একাধিকবার বাঁধে ধসের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ও বিকল্প আরেকটি বাঁধ নির্মাণের ফলে একটানা একসপ্তাহ প্রশাসনের নজরদারির পাশাপাশি কৃষকরা কাজ করে বাঁধটি রক্ষা করেছিলেন। তখন হাওরের বুকে আধা-কাঁচা বোরো ধান। কষ্টার্জিত ফসল ডুবির শঙ্কায় চোখে ঘুম ছিলনা কৃষক পরিবারের লোকজনের। এবার ওই বাঁধে প্রায় দুমাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ ধরা হয়নি। যেকারণে কাজ নিয়ে শঙ্কায় ভুগছিলেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, গত বার দিনরাত একাকার করে আমরা হাওরের মানুষ ধসে যাওয়া বেড়িবাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধটি টিকিয়ে ছিলাম। সেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আজও কাজ শুরু হয়নি। বাঁধের কাজ নিয়ে আমরা শঙ্কিত আছি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাওরে ধীরগতি কাজ চলছে। এরমধ্যে গত বছরের অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে এবার এখন পর্যন্ত কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। দ্রুত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে কাজ শেষ করার জন্য তিনি আহবান জানান।
চার নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রনধীর কান্ত দাস নান্টু বলেন, প্রকল্পে কাজ চলমান। ভাঙা অংশে হাওরের কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য কাজ করা হয়নি। জমিতে কৃষি সেচ শেষ হলেই কাজ শুরু হবে। আশা করছি, এক দুই দিনের মধ্যে কাজ ধরতে পারব। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ২৪ কিলোমিটার এলাকায় ৪৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) মাধ্যমে ৪৫টি প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। অপর দুইটি প্রকল্পে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এসব প্রকল্পের কাজের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১০ কোটি টাকা।