স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে সরকারি টাকায় নির্মিত ১০ লাখ টাকার ম্যুরালের ডিজাইন পরিবর্তন করায় ধর্মপাশা ও মধ্যনগরে আওয়ামী লীগের একপক্ষ ক্ষুব্ধ, আরেকপক্ষ বিষয়টিকে বড় করে দেখার কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছে। মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বুধবার আগামী সাত দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু’র ম্যুরাল থেকে এমপি ও তাঁর ভাইয়ের ছবি অপসারণের দাবি জানিয়ে লিখিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কর্মসূচী দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের একপক্ষ এই ঘটনাকে ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধৃষ্টতা’ উল্লেখ করে মানববন্ধন কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে।
ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ বললেন, ‘আমরা বংশানুক্রমিক ভাবেই আওয়ামী লীগের কর্মী। জাতির পিতা আমাদের অস্তিত্ব। সরকারি টাকায় ডিজাইন অনুযায়ী ম্যুরাল না করে ইচ্ছেমাফিক এমপি ও তাঁর ভাই, যে কি-না বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছে তাঁর ছবি বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে সেটে দেওয়া হবে, এটি কোনভাবেই মানা যায় না। আমরা ছবি অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হাসান চৌধুরী বললেন, সরকারি সিদ্ধান্তকে তাচ্ছিল্য করে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এভাবে ছবি সাটানো কোনভাবেই মানা যায় না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই বললেন, এমপি সাহেব সবসময় দলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করেন। এবারও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ম্যুরালে তাঁর সঙ্গে ভাইয়ের ছবি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে এমন কাজ হতে দেওয়া হবে না।
ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা হিমু বললেন, এমপি সাহেব ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ না করেই এমপি হয়েছেন। এজন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতি দরদ তাঁর কম। আমরা সরকারি টাকায় হওয়া ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্য শেখ হাসিনা ছাড়া কারো ছবি দেখতে চাই না।
মধ্যনগরের দক্ষিণ বংশিকু-া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বললেন, ভুলটা বড়ই হয়ে গেছে। এমপি সাহেবকে ম্যাসেঞ্জারে এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলাম। তিনি আমলে নেন নি। এটি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস অবশ্য বলেছেন, এটি লঘু ভুল, বড় কোন অপরাধ নয়। জাতীয় নির্বাচন সামনে, এসময় অবশ্য আরেকটু সতর্ক থাকা উচিত।
মধ্যনগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বললেন, আমরা ইউএনও’র নিকট ছবি অপসারণের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। এটি না করলে এক সপ্তাহ পর আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া হবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বললেন, যেহেতু কাজটি ধর্মপাশা উপজেলা করছে তাই আমি আওয়ামী লীগের স্মারকলিপি ফরওয়ার্ড করে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বললেন, মধ্যনগরের নির্মিতব্য ফলকটি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নয়। নির্মণাধীন বঙ্গবন্ধু চত্বর এটি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অযথাই রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। ভুল তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা করছে। এটি কাম্য নয়। নেত্রকাণার বারহাট্টাসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ ধরণের ম্যুরাল আছে। কোথাও এমন বিতর্ক সৃষ্টি হয় নি।
প্রসঙ্গত, ধর্মপাশা উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফ উল্লাহ খান এই বছরের ২৩ জুনে দেওয়া চিঠিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধর্মপাশার মেসার্স রানা ট্রেডার্সকে নয় লাখ ৯৯ হাজার সাতশ ২৪ টাকা চুক্তিমূল্যে ত্রিশ দিনের মধ্যে মধ্যনগর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেন। ওই ম্যুরালের ডিজাইনে একপাশে বঙ্গবন্ধু ও আরেকপাশে কেবল শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। সেখানে কোন অনুমতি ছাড়াই একপাশে শেখ হাসিনার ছবির নিচে সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও তার ভাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকনের ছবি যুক্ত করা হয়েছে। কাগজেপত্রে কাজের ঠিকাদার মেসার্স রানা ট্রেডার্স হলেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঠিকাদারী লাইসেন্সটি এনে, তাঁর পছন্দের চুন্ন মিয়া নামের একজনকে দিয়ে কাজটি করিয়েছেন।
- জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন/ আ.লীগের আকমল জয়ী
- সুনামগঞ্জে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ, ৪ জনের যাবজ্জীবন