স্বস্তির বৃষ্টিতে আশঙ্কামুক্ত কৃষক

বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
স্বস্তির বৃষ্টি। খরায় চৌচির জমিনে বৃষ্টির ফুরফুরে আমেজ। উবে গেছে কৃষকের সব দুর্ভাবনা। সতেজতার হাতছানি এখন কষ্টের আবাদকৃত জমিনে। কৃষকের ধারদেনায় রোপণকৃত মরাঞ্চে হাওর এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। গাঢ় সবুজের ধানসারি ধীরে ধীরে ফলনে ভরে উঠবে। প্রকৃতির বৈরি আচরণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল জামালগঞ্জের প্রায় ২৬ হাজার কৃষক। স্বল সময়ের অঝর বৃষ্টি স্বস্তি ফিরিয়েছে কৃষকের মনে।
গত সোমবার জামালগঞ্জের হালি হাওর পারের লম্বাবাঁক গ্রামের ফুটবল খেলার মাঠে কৃষকেরা একত্রিত হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে দু’হাত তুলে বৃষ্টি কামনা করেছেন। মেঘের আর্তনাদ ছিল কৃষকের চোখে মুখে। পল্লীগীতির সুরে হাওর পারের কৃষকেরা হয়তো গেয়েছেন- ‘আল্লাহ্ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই, আল্লাহ্ মেঘ দে। আসমান হইল টুটা টুটা, জমিন হইল ফাটা, মেঘ রাজা ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব তোর কেডা।’ কৃষকের আর্তিতে সৃষ্টিকর্তা হয়তো তুষ্ট। প্রথমে ছিটেফোঁটা। তারপর মিনিট বিশেকের অঝোর ধারা কৃষকের মনে স্বস্তি ফিরিয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব পড়তে বসেছিল হাওরে। বৃষ্টি হওয়ায় সেচ সঙ্কটের যে প্রভাব পড়েছিল জমিনে সেটা দূর হয়েছে। পানির অভাবে ফেটে যাওয়া বোরো ক্ষেত এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বোরো রোপণের পর থেকে হাওরে বৃষ্টি হয়নি। বহু প্রতীক্ষার পর গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে বোরো ফলন প্রায় ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল। এ মুহূর্তে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকেরা রক্ষা পেয়েছে। বৃষ্টির কল্যাণে ঋণের টাকায় চাষকৃত জমিতে হয়তো আশানরূপ ফলন হবে। বৃষ্টির জন্য যে মোনাজাত সৃষ্টিকর্তা তা কবুল করেছেন বলে অভিমত কৃষকের।
হালি হাওর পারের বদরপুর গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া বলেন, বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের একশ ভাগ ভালো হয়েছে। এখন ফলন ভালো হবে। খরার কবলে পড়ে হাওর পারে যে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল সেটা দূর হয়েছে। আল্লাহ ডাক কবুল করেছেন।
মামুদপুর গ্রামের কৃষক মো. মসিউর রহমান বলেন, যখন প্রয়োজন ঠিক তখনই বৃষ্টিটা হইছে। না হইলে নিশ্চিতভাবেই কৃষকের ক্ষতি হইতো। বিশেষ কইরা টানের জমিগুলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হইত। বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে যে জমিগুলা কাটা পড়ে সেগুলোতে বৃষ্টির প্রভাব বেশি পড়ত। হাওরাঞ্চরের মানুষের বৃষ্টির চাওয়া পূর্ণ হইছে। বৃষ্টির হওয়ায় পোকামাখড়ের উপদ্রবও কইম্যা যাইব।
উত্তর কামলাবাজ গ্রামের কৃষক ও ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় ধানে ছিটা দেখা দিয়েছিল। ধান গাছ লালচে হয়ে যাচ্ছিল। এতে করে ফলনের পরিমাণও কমে যেত। এ অবস্থায় চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের যে টাকা খরচ হয়েছিল তা উঠবে কি না সন্দেহ ছিল। অবশেষে বৃষ্টি হওয়ায় সব শঙ্কা কেটে গেল কৃষকের।
জামালগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, আমরা জানতাম দু’একদিনের মধ্যে বৃষ্টি হবে। যাই হোক বৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকেরা উপকৃত হবে। বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও আশা করি পূর্ণ হবে। যদি সপ্তাহ দশদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হত তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি ছিল। এতে পোকা-মাখড়ের আক্রমণও বাড়ত। বিভিন্ন রোগও দেখা দিতে পারত।
তিনি আরও জানিয়েছেন, জামালগঞ্জের ৬টি হাওরে ২৪ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। প্রায় ২৬ হাজার কৃষক এ জমি আবাদ করেছেন। এতে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।