কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সম্বোধনের কোন বিধি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সুনামগঞ্জে নেই। এমনটিই জানিয়েছেন তথ্যগ্রহীতাকে কার্যালয়টির তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা। উন্নয়নকর্মী সালেহীন চৌধুরী শুভ জানতে চেয়েছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কী বলে সম্বোধন করতে হবে তার কোন আইন বা বিধি আছে কিনা। সিলেটের এক নারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে জনৈক মাছ বিক্রেতা ‘আপা’ সম্বোধন করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কর্মকর্তা মাছ বিক্রেতাকে লাথি মেরেছিলেন। শুভ সম্ভবত ওই ঘটনায় আন্দোলিত হয়েই এমন তথ্য জানতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। যাহোক, তাঁর কপাল আপাতত মন্দ। তিনি জ্ঞাত হতে পারলেন না আদতেই এমন কোন বিধি বা প্রজ্ঞাপন অথবা অন্য কোন অনুসরণীয় নির্দেশাবলী রয়েছে কিনা। তবে সহকারী কমিশনার কর্তৃক মাছ বিক্রেতাকে লাথি মারার পর শুভ’র এ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় সচেতন মহল বেশ আগ্রহান্বিত ছিলেন যে প্রশাসনিক সিস্টেমে এরকম কোন নির্দেশনা রয়েছে কিনা তা জানতে। শুভ’র মতো এই আগ্রহী মহলটিও নিরাশ হলেন। হালে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জনগণের সেবক বলা হয়ে থাকে। সম্প্রতি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের শ্রেণিভেদ (১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি বলে সরকারি কর্মচারীদের যে শ্রেণিভেদ) বিলুপ্ত করে যার যার গ্রেডকেই মর্যাদার স্থান হিসাবে নির্দেশিত করা হয়েছে। বর্তমানে বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড বলবৎ আছে। আগের ৪টি শ্রেণি থেকে এবারে ২০টি শ্রেণিতে সরকারি কর্মচারীরা বিভক্ত হলেন, বেশ চমৎকার বিষয়ই বটে।
প্রশাসনের অন্দরমহলে তাঁরা কে কোন মর্যাদায় পরিচিত হবেন সে তাঁদের বিষয়। কথা হলো, বহির্মহলে অর্থাৎ জনগণের কাছে তাঁদের পরিচয় কী অথবা জনগণের সাথে তাঁদের মর্যাদার তুলনাটা কেমন হবে? আমরা যখন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে প্রজাতন্ত্রী অর্থাৎ প্রজাশাসিত বলে থাকি, তখন নিশ্চিতভাবেই আমরা সাধারণ মানুষের অগ্রবর্তী অবস্থানেরই ঘোষণা করি। এর বিপরীতে প্রজাতন্ত্রের কাজ করার জন্য যারা নিয়োজিত হন, সরকারি কর্মচারী বলে যাদের আমরা চিনি, তাঁরা প্রজাতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কখনও সর্বসাধারণের উপরে স্থান পেতে পারেন না। সামষ্টিক এই বিবেচনাবোধটি ভেঙে যায় যখন সর্বসাধারণের কোন এক বা একাধিকজন বিচ্ছিন্নভাবে সরকারি কর্মচারীদের নিকট কোন কাজে গমন করেন। সরকারি চেয়ারে বসা ব্যক্তিরা তখন ভুলে যান আসলে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী অর্থাৎ যে লোকটি কাজে এসেছেন তাকে সেবা দেয়ার জন্যই তিনি নিযুক্ত । এই ভুলে যাওয়ার পিছনে এই জনপদে প্রশাসনিক সংস্কৃতির পূর্ব-ইতিহাসের যোগসূত্র একেবারে প্রত্যক্ষ। বর্তমান ধাঁচের প্রশাসনিক ব্যবস্থাটি ব্রিটিশ উপনিবেশ দ্বারা প্রবর্তিত। তাঁরা রাজার পক্ষে সাধারণ প্রজাদের শাসন করার জন্যই ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার বাহাত্তর বছর অতিক্রম হলেও আমাদের প্রশাসনিক কাঠামো নিজেদের মাথা থেকে ওই ব্রিটিশ ভূত তাড়াতে পারেনি। পারেনি বলেই কোন এক মাছ বিক্রেতা ‘আপা’ বলে ভীষণ আন্তরিক সম্বোধন করার পরও ছোট্ট একজন আমলাও রেগে অস্থির হয়ে পড়েন।
‘স্যার’ শব্দটির মধ্যে প্রভুত্বের লক্ষণ স্পষ্ট। আনুগত্য প্রকাশ করতেই অধস্তন ব্যক্তিটি উর্দ্ধতনকে স্যার বলে সম্বোধন করেন। জনগণের শাসন তথা গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা উন্মেষের সাথে সাথে এই দৃষ্টিভঙ্গিও দেশে দেশে পালটে গেছে। প্রভু বলে পরিচিত দেশগুলোতেও হালে এর ব্যবহার বিলুপ্ত। বরং সেখানে ব্যক্তিকে তাঁর নাম বা পদবি দ্বারাই পরিচিত করানো হয়। যেমন মিস্টার ট্রাম্প অথবা মি: প্রেসিডেন্ট। আমরাও অগ্রগতির সিঁড়ি আরোহণ করার কোন এক পর্যায়ে এই অভ্যাস রপ্ত করে ফেলব। এই আশা নিয়েই এতদসংক্রান্ত বিধি খোঁজার (যা মূলত থাকারই কথা নয়) যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চাই।
- শিশু কন্যা ধর্ষণের অভিযোগে ১ কিশোর গ্রেফতার
- জাম পাড়তে গিয়ে প্রাণ গেল শিশুর