স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলে প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মেয়র জগন্নাথপুরের আতিকুল

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন
উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলে প্রথমবারের মত মেয়র হয়ে ব্রিটেনের বহুজাতিক সমাজে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন কাউন্সিলর আতিকুল হক। তিনি স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী মেয়র।
গত ১৩মে শনিবার স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বারার ৭৬২তম দ্য-রাইট ওয়ার্শিপফুল দ্য-মেয়র হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে। ঐতিহাসিক এই ইভেন্টের সাক্ষী হতে পার্শ্ববর্তী শহরগুলির মেয়র, সরকারি কর্মকর্তা, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি, ব্রিটিশ ম্যালটিক্যালচারাল সোসাইটির বিশিষ্টজনসহ দুই শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। বিদায়ী মেয়র টম করবিন মেয়র আতিকুল হকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে কাউন্সিলার আতিকুল হক বলেন, স্যালিসবারির জনগণ তাদের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি মুসলিম মেয়রকে বেছে নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আমি আশাবাদী এটি অন্যদেরকেও এগিয়ে আসতে এবং স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলের সাথে যুক্ত হতে উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, স্যালিসবারি সম্প্রতি একটি কঠিন সময় পার করে এসেছে- নভোচক ঘটনা থেকে শুরু করে মহামারী পর্যন্ত। এখন সময় এসেছে আমাদের এই সবকিছুকে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসর হওয়ার। আমাদের সুন্দর প্রাচীন এই শহরটিকে আরও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে এগিয়ে নেবার ব্যাপারে আমি আশাবাদি। আমি ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবো এবং আমাদের হাই স্ট্রিটকে সমৃদ্ধ করতে আরো কাজ করব। ২০২৩-২০২৪ এর জন্য মেয়রের অন্যতম কাজ হবে দাতব্য সংস্থা স্যালিসবারি রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ রাইডিং ফর ডিসএবলড অ্যাসোসিয়েশন এবং স্যালিসবারি হসপিসের মধ্যে বণ্টন করা। উইল্টন রোটারি ক্লাবের সাথে সমন্বয় করে এবং মেয়র অ্যাপিল রোটারী ক্লাব অব উইলটন ট্রাস্ট ফান্ড হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই দাতব্য সংস্থাগুলিকে অনুদান প্রদান করা।
এই বারায় তার সহযোগী হিসেবে ২০২৩-২০২৪-এর জন্য ডেপুটি মেয়র হয়েছেন কাউন্সিলার সেভেন হকিংল।
উল্লেখ্য, আতিকুল হক এর জন্ম জগন্নাথপুরের শ্রীরামসী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তিনি বাঙালি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এর ব্রিকলেনে বেড়ে উঠলেও ব্যবসায়ী এই পরিবারটি পাড়ি জমান উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি এলাকায়। শতভাগ ইংরেজ অধ্যুষিত এলাকায় গড়ে তুলেন নিজেদের আবাসস্থল। ২০১০ সালে আতিকুল হক মেইনষ্ট্রীম ব্রিটিশ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ২০১৩ সাল থেকে কনজারভেটিভ পার্টির কাউন্সিলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনিই এই বারায় একমাত্র বাঙালি কনজারভেটিভ দলীয় কাউন্সিলার বার বার নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এছাড়াও এই স্যালিসবারির সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে আসেন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়াড হিথ। ব্রিটেন তখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়াড হিথ। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু যখন দশ নাম্বার ডাউনিং স্ট্রীটে পৌঁছান তার গাড়ির দরজা খুলে দেন স্যার এডওয়াড হিথ। এরপর দেড় মাসের মাথায় ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই স্যালিসবারির সন্তান স্যার এডওয়াড হিথ। এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে কাউন্সিলার আতিকুল হক লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন। বর্তমান হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম কাউন্সিলার আতিকুল হকের আমন্ত্রনে স্যালিসবারি কাউন্সিল এবং স্যার এডওয়াড হিথের জন্মস্থান পরিদর্শন করেন। এই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে এছরে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন চালু করে ‘বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড’। যার নেপথ্যে কারিগর এই আতিকুল হক।