সড়ক কষ্ট ঘুচলো না জামালগঞ্জবাসীর

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের সঙ্গে জামালগঞ্জ উপজেলা সদর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশার যোগাযোগ রক্ষাকারী কাঠইর-জামালগঞ্জ সড়কে ভোগান্তি রয়েই গেছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে সড়কটি চালু থাকবে কী-না এই নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এই সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশসহ কিছু অংশ এর আগে দুইবার ভেঙেছে। এবারও এখানে জরুরি মেরামত কাজ করা হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পানি বেশি হলে, এবারও এই অংশ ভেঙে সড়ক বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
জামালগঞ্জের ভাটি অংশ, মধ্যনগর, ধর্মপাশা উপজেলার বাসিন্দাগণ জেলা সদরে আসেন মান্নানঘাট-জামালগঞ্জ-কাঠইর সড়ক দিয়ে। এই পথে সরাসরি যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ছয় লাখের বেশি মানুষ সুনামগঞ্জ জেলা সদরে আসতে ভোগান্তিতে পড়েন।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ-মান্নানঘাট সড়কের দৈঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় এই সড়কের সদর উপজেলার কাঠইর থেকে শাখাইতি ও হুসেন নগর গ্রামের অংশ পর্যন্ত খানাখন্দে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের জাল্লাবাজ ও উজ্জ্বলপুর গ্রামের কাছে কয়েকশ ফুট পাকা সড়ক ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া জামালগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রবেশদ্বার শাহপুর বাঁধ ভেঙে সড়কে হয়েছিল খাল।
জরুরি কাজ করে এই সড়ক দিয়ে লেগুনা, সিএনজি, ছোট পিকআপ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিলেও বর্ষা এলেই আবারও দুর্ভোগে পড়ার আশংকা এলাকাবাসীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে জামালগঞ্জ থেকে জয়নগর কাঠইর সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জে আসতে সিএনজি খুঁজছিলেন জামালগঞ্জের গণমাধ্যম কর্মী ওয়ালি উল্লাহ্ সরকার। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও কোন সিএনজি এই সড়ক দিয়ে আসতে রাজি হয় নি।
সিএনজি চালকরা বললেন, ভাঙাচোড়া ইটের সড়ক দিয়ে চলাচল করলে ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়’ অর্থাৎ এই সড়ক দিয়ে চললে ভাড়া যে টাকা পায়, গাড়ীতে খরচ লাগে এর চেয়েও বেশি। চালকরা জানালো জামালগঞ্জের ভীমখালি বাজার হয়ে শান্তিগঞ্জের নোয়াখালি হয়ে সুনামগঞ্জে নিয়ে যেতে পারবে তারা। ওদিকে গেলে সময় বেশি লাগবে চিন্তা করে পরে নদী পাড় হয়ে সাচনাবাজার থেকে সুনামগঞ্জে আসেন ওয়ালি উল্লাহ॥
ওয়ালি উল্লাহ্ বললেন, জরুরি মেরামত কাজ করে এই সড়কে যে টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পথচারীরা তাতে সাময়িক কয়েকদিন অর্থাৎ পানি আসার আগে পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। এখানে বার বারই টাকার অপচয় করা হয়। ঢল মোকাবেলা করার মত সড়ক না করলে, এই পথ ঠিকবে না। কেবল সরকারি অর্থের অপচয় ও লুটপাট হবে।
সুনামগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সকালে জামালগঞ্জের জাল্লাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান খালেদা বেগম। বললেন, সড়ক দিয়ে আসতে ভয় হয়, হাড়গোড় ভেঙে যাওয়ার মত অবস্থা। চাকুরি করছি, এজন্য আসতে হচ্ছে।
উজ্জ্বলপুর গ্রামের এমদাদ হোসেন বলেন, ‘ইমার্জেন্সি ওয়ার্কের নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ভারী বর্ষণ হলে, এই টাকা পানিতে যাবে।
এলজিইডির জামালগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান বললেন, এই সড়কের উজ্জ্বলপুর অংশ দুইবার বন্যায় ভেঙেছে। দুই বছর আগে যে অংশ ভেঙেছিল, ওই অংশ গতবছর ভাঙেনি, পাশের অংশ ভেঙেছে। দুই বছর ভাঙার পর আমরা যেভাবে কাজ করেছি, দুই পাশে ব্লক বিছিয়ে বাকী অংশ এভাবে কাজ করলে সহজে ভাঙবে না। এই অংশে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য ১৪ লাখ টাকার জরুরি কাজ করা হয়েছে। অন্য অংশের সড়ক সংস্কার ও চলাচল উপযোগী করতে সুনামগঞ্জ এলজিইডি বালু-ইট-সুড়কি ফেলেছে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র জ্যেষ্ট প্রকৌশলী হরজিৎ সরকার বললেন, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের ১০ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ সদরের সীমানায়। এরমধ্যে বেশি খারাপ চার কিলোমিটার অংশ প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর ঠিকাদার মেসার্স ক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেসার্স বেলাল এন্টার প্রাইজ কাজ করছে। অন্য অংশে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ক হয়েছে। সড়কটিকে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল উপযোগী করে দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বললেন, কাঠইর থেকে মান্নানঘাট পর্যন্ত সড়ককে ঠেকসই করে করার জন্য প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এডিবির (এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক) অর্থায়নে বর্ষার আগেই এই সড়কের কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকার দরপত্র হবে। তবে এই বছর বর্ষার আগে কোন কাজ করা যাবে না।