সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা অফিস সময়ের পর বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারিত সম্মানী নিয়ে রোগী দেখার একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হচ্ছে আগামীকাল থেকে। প্রথমে ১০টি জেলা ও ২০টি উপজেলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নার্স, টেকনিশিয়ান, হাসপাতালের রোগ পরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে এই কাজে। জড়িত সকলকেই দেয়া হবে আনুপাতিক হারে আর্থিক সুবিধা। অধ্যাপক, সিনিয়র কনসালটেন্ট, সহকারি অধ্যাপক ও এমবিবিএস চিকিৎসকগণ যথাক্রমে ৫০০, ৪০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা হারে সম্মানী নিবেন রোগীদের নিকট থেকে। এর একটি অংশ পাবে সাপোর্ট স্টাপরা। এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা হয়। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হলোÑ রোগীবান্ধব এই কর্মসূচিটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা নিয়ে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন যেভাবে অতি বাণিজ্যিকরণ হয়ে গেছে তাতে জড়িত চিকিৎসক ও অন্য অংশীজনরা সরকারের এই মহতী কর্মসূচিকে কীভাবে গ্রহণ করেন সেটাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ।
সরকারি চিকিৎসকরা এখন যেকোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগী দেখতে পছন্দ করেন। সম্মানী নেয়ার ক্ষেত্রে কেউ সরকারি নিয়ম-কানুনের ধার ধারেন না। রোগ পরীক্ষার নামে ঢালাওভাবে দেয়া হয় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা যা ব্যয়বহুল ও সাধারণ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অসহনীয়। অভিযোগ আছে এই সব টেস্ট থেকে চিকিৎসকরা নির্ধারিত হারে কমিশন পেয়ে থাকেন। একজন চিকিৎসক দিনে কতজন রোগী দেখতে পারবেন তারও কোনো নিয়ম নেই। বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা একনাগাড়ে রোগী দেখে চলেন। এতে রোগীর প্রতি চিকিৎসকের মনোসংযোগের ঘাটতি পড়ে কিনা এবং এ কারণে সঠিক চিকিৎসা ব্যাহত হয় কিনা তা নিয়েও কারও চিন্তা নেই। বাংলাদেশে রেফারেল সিস্টেম মোটেই গড়ে উঠেনি। রোগী প্রাথমিক পর্যায়েই অধ্যাপকের শরণাপন্ন হতে চান। এতে অধ্যাপক বা জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের চেম্বারে রোগীর অত্যধিক চাপ তৈরি হয়। অথচ সকল রোগীই যদি প্রাথমিক পর্যায়ে একজন এমবিবিএস চিকিৎসকের নিকট যান এবং প্রায়োজনমাফিক উনার রেফারেন্সে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের নিকট প্রেরিত হন তা হলে একদিকে যেমন সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায় তেমনি জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকের উপর চাপও কমে আসে। এজন্য রেফারেন্স ছাড়া জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের রোগী দেখা বন্ধের নিয়ম প্রবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশের বড় জনগোষ্ঠী আর্থিক সামর্থের অভাবে টাকা দিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সক্ষমতা রাখেন না। এরা হাসপাতালের সেবার উপর নির্ভরশীল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান একেবারেই হতাশাজনক এবং সরকারি সেবা পেতেও ঘাটে ঘাটে টাকা খরচের এন্তার অভিযোগ সুবিদিত। ফলে এই জনগোষ্ঠী প্রায় বিনা চিকিৎসা বা অপূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকেন। এই অবস্থার অবসানকল্পে একদিকে যেমন হাসপাতালগুলোর সেবার মান ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে তেমনি চিকিৎসকদের বেপরোয়া প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ ও আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। এর একটি হলো বৈকালিক সময়ে হাসপাতালের চেম্বারে বসে নির্দিষ্ট সম্মানীর বিনিময়ে রোগী দেখার আসন্ন ব্যবস্থাটি। এই ব্যবস্থা সফল হলে কিছুটা কম খরচে মানুষ চিকিৎসাসেবা লাভ করার সুযোগ পাবেন।
চিকিৎসকরা যাতে মানবিক বোধ দ্বারা তাড়িত হয়ে সরকারের এই গণবান্ধব ব্যবস্থাটিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন সেই প্রত্যাশা আমাদের। বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রভৃতি নানা মহল থেকে সরকারের এই কর্মসূচিকে ভ-ুল করতে নানা অপকৌশল গ্রহণ করা হবে। বাধা থাকতে পারে খোদ চিকিৎসক সমাজ থেকে। থাকতে পারে হাসপাতাল চেম্বারে অমনোযোগিতা, অনান্তরিকতা ও ঢিলেমিপনা। সরকারকে সেই অপকৌশল ভেদ করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা স্বাধীন দেশে একটি গণবান্ধব সুন্দর চিকিৎসা কাঠামো দেখতে চাই।
- ধর্মপাশায় মোবাইল ছিনতাইকালে কিশোর গ্যাংয়ের চার সদস্য আটক
- টমটম চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু