মধ্যনগর সংবাদদাতা
মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার সংযোগ স্থলে গোরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপ-প্রকল্পের এবার বাঁধের কাজ হচ্ছে না। এজন্য কলমা, শালদীঘা, কৈয়ারকুড়ি, ছোটবিল, ঘাসীগাং, ইয়ারনবিল, কুড়ি সহ আরও ছোট বড় বেশ কয়েকটি হাওরের ফসল নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। দুই উপজেলার ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষকের জমি রক্ষায় উৎকণ্ঠা আছে।
জানা যায়, বাঁধ হবে না জেনে মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন ও তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে। দুই ইউনিয়নের কাউহানী, চাপাইতি, বীরসিংহপাড়া, মাকরদি, সানুয়া, শিশুয়া, হাতপাটন, বাসাউড়া, বংশীকুন্ডা, নিশ্চিন্তপুর, উত্তিয়ারগাঁও, নোয়াগাঁও, মহজমপুর, গোলাবাড়ী, লামাগাঁও গ্রামের মানুষের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এক ফসলি বোরো ধান।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপ-প্রকল্পে গত দেড় যুগ ধরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে পাউবো। গত বছর (২০২১-২২) অর্থবছরে ৭টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা অধিক ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের জুনের প্রলয়ংকরী বন্যায় বাঁধটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ এবার এই বাঁধের সংস্কারও হচ্ছে না।
কাউহানী গ্রামের এনামূল হক শান্ত বলেন, আমাদের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল। আর এ ফসলের মাঝেই আমাদের আগামী একবছরের স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলছে। কারণ এখনো আমাদের হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার হয়নি, হবার কোনো সম্ভাবনাও দেখছিনা। আমাদের পরিশ্রমে বুনা ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ‘
শ্রীীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিশ্বজিত সরকার বলেন, শুনেছি এবার গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপ-প্রকল্পটিতে পাউবো কাজ করবে না। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত কেন নিলো বুঝতে পারলাম না। এই প্রকল্পের আওতায় শুধু কলমা ও শালদীঘা হাওর নয়, ঢলের পানি আসা মাত্রই কৈয়ারকুড়ি, ছোটবিল, ঘাসীগাং, ইয়ারন বিল, কুড়ির হাওর সহ আরও কিছু হাওর বা বিলের ফসলি জমি তলিয়ে যাবে।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, জেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এসময় বাঁধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি স্থানীয় কৃষক, জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রকল্পটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে উপস্থিত সকলেই তখন মতামত দেন। সেখানে উপস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এই বাঁধের আওতায় শালদীঘা হাওরেই প্রায় চারশো হেক্টর কৃষিজমি রয়েছে। জেলা প্রশাসক শেষে বলেন, এই প্রকল্পের একটি বড় পানি নিস্কাশনের খাল বন্ধ করা সহ ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, যেহেতু এই প্রকল্পটি অ্যালাইনম্যান্ট থেকে বাদ পড়েছে সেহেতু এখানে এবার কাজ করার সুযোগ নেই। এসময় তিনি স্থানীয় কৃষকদের উদ্যোগে বাঁধটি সংস্কার করার পরামর্শ দেন।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, এই প্রকল্পের বিষয়ে জেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি কোন সিদ্ধান্ত দেয় নি। তাই এই বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কার হবে কিনা বলা যাচ্ছে না।
- স্কুলে পুষ্টি সমৃদ্ধ মিডডে মিল চালু করা হবে
- নলুয়ায় এক কিলোমিটারে মাটি পড়েনি