বিশেষ প্রতিনিধি
দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট জেলার টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো-ট্যুরিজম জোন হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান বা নৌযানের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। হাওরে পর্যটক আসা বাড়ায় যন্ত্রযানও বেশি ঢুকছে। কিন্তু এসব যন্ত্রযানের কোন নির্ধারিত রুট বা পথ নেই। কোথায় গিয়ে এগুলো থামবে, কোন পথ দিয়ে যাবে সেটি চিহিৃত করে দিতে হবে। না হলে যন্ত্রযানের তা-বে প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় অভিজ্ঞজনেরা।
টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের জয়পুরের বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী কবির আহমদ বললেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের গাছ, মাছ ও পাখি বাঁচিয়ে রাখতে যন্ত্রযান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাওরের নানা পথ দিয়ে শত শত ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এমনকি হাউস বোট মধ্যনগর দিয়ে ঢুকে জয়পুর পর্যন্ত আসে। আবার জয়পুরের দিকে ঢুকে মধ্যনগর পর্যন্ত যায়। ট্রলার-বোটের এমন এলাপাতাড়ি চলাচল না ঠেকালে হাওরের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হবে। তার মতে, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বা হাউসবোট তাহিরপুর থেকে পাটলাই নদী দিয়ে সীমান্তের টেকেরঘাট পর্যন্ত যাবে। অপরদিকে মধ্যনগর থেকে সোমেশ^রী, পাটলাই নদী হয়ে টাঙ্গুয়ার ওয়াচ টাওয়ারে এসেই থামতে হবে। কোনভাবেই হাওরে প্রবেশ করা যাবে না। হাওরে যেতে চাইলে পর্যটকবাহী ছোট ছোট বারকী নৌকায় বা আগেকার দিনের সুয়ারি বা নাইয়রি নৌকায় হাতিরঘাতা, রূপা-বৈসহ পুরো হাওরেই যেতে হবে।’
রাজধানী ঢাকার হাউস বোট চন্দ্রাবতী ও রূপকথার মালিক ইখতিয়ার হোসেন বললেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে এখন ৭৫ টি হাউস বোট এবং ২০০ ট্রাডিশনাল বোট পর্যটক বহন করছে। সব মিলিয়ে যন্ত্রযান প্রায় চারশ হবে। এই নৌ-যানগুলোতে চলাচলের পথ নির্ধারণ করে দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই পর্যটক বহন করতে হবে সকলকে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দীর্ঘদিন কাজ করছেন উন্নয়ন কর্মী এহিয়া সাজ্জাদ। তিনি বললেন, সুনামগঞ্জ থেকে সুরমা, বৌলাই, পাটলাই নদী হয়ে টাঙ্গুয়ার পাড়ের গোলাভারীতে এসে থামবে পর্যটকবাহী নৌ-যান। অন্যদিকে, মধ্যনগর থেকে বংশিকু-া বাজার বা চাপাইতি এসে থামতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌ-যান গুলোকে। ওখানে থাকবে পর্যটকদের বহন উপযোগী হাতে বাওয়া নৌকা। এগুলো দিয়েই হাওরে ঘুরতে হবে পর্যটকদের। অনেক সময় সুনামগঞ্জ থেকে মোটর সাইকেলে ডাম্পের বাজার, নতুন বাজার বা শ্রীপুর পর্যন্ত গিয়ে পর্যটকরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মন্দিহাতা বা গোলাভারী দিয়ে হাওরে ঢুকেন। এটিও বন্ধ করতে হবে। ওখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা না নিয়ে হাতে বাওয়া নৌকায় যেতে হবে হাওরে। তাহিরপুর থেকে পাঠাবুকা হয়ে গোলাভারীতে পৌঁছাতে হবে। পরে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঢুকতে হবে হাতে বাওয়া নৌকায়।
টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন বললেন, সুনামগঞ্জ থেকে উত্তর শ্রীপুরে বা শ্রীপুর বাজারে, তাহিরপুর থেকে গোলাভারী, মধ্যনগর থেকে বংশিকুন্ডা পর্যন্ত ইঞ্জিন চালিত নৌযান চলার অনুমতি থাকতে হবে। এরপরই হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতরে ঢুকতে হবে। যেখানে পর্যটকবাহী ট্রলার বা হাউস বোট থামবে, একসময় এর আশপাশের গ্রামে ছোট ছোট ইকো রিসোর্ট গড়ে ওঠবে। ওখান থেকে হাতে বাওয়া নৌকায় হাওরের ভেতর পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার ভালো ব্যবস্থাও একসময় গড়ে ওঠবে। তাতে কর্মসংস্থান বাড়বে স্থানীয় লোকজনের।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরশাদুল হক বললেন, পর্যটকদের ভ্রমণ জরুরি কিছু নয়। মানুষের চলাচল ঠিক রেখে পাখি কিংবা মাছের অভয়াশ্রম যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ঠিক করে দিতে হবে। তিনি জানালেন, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণপাড়া ও চেরাদিয়ায় প্রবাল বেশি থাকে, এজন্য ওখানে পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ক্ষেত্রেও একইভাবে পর্যটকদের ভ্রমণক্ষেত্র সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
গেল শনিবার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকবাহী নৌ-যানের শতাধিক মালিক-চালক ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় হাওরে যন্ত্রযানের রুট নির্ধারণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবার কথা বলেন আলোচকরা। যন্ত্রযানের কারণে প্রকৃতি-পরিবেশ বিপন্ন হওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। পরে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব-বৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন পথ দিয়ে নৌ-যান চলতে পারবে না। আমরা সেই নীতিমালা তৈরির কাজ করছি।
- রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের যুগ্মসচিব হলেন আতাউল গণি
- দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন