অনন্তলোকে আপনার যাত্রা শান্তির হোক

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি
বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ত ম সালেহ ভাই গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না —রাজউন)। এক সময় শহর দাপিয়ে বেড়ানো অগ্রজদের ওপারে চলে যাওয়ার মিছিলে সর্বশেষ যোগ দিলেন সালেহ ভাই। মায়া-মমতায় জড়ানো আমাদের জল-জোছনার গ্রামীণ শহরে আমরা সবাই ছিলাম এক পরিবারের মত। সালেহ ভাইদের বেশ বড় বন্ধুমহল ছিল। এক সাথে চলাফেরা করতেন তাঁরা।
আমাদের ছাত্র জীবনে তাঁদের অনেকে এক রাজনৈতিক প্লাটফর্মেও যোগ দিয়েছিলেন। পরে জাসদের রাজনীতিতেই ফিরে যান সালেহ ভাই। জেলা সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। আমৃত্যু জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।
বন্ধুদের ভেতর তাঁর আগেই চলে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মোসাদ্দেক রেজা, বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন ভদ্র, আইনজীবী সত্যব্রত রায় বুলু। একে একে শহর অভিভাবক শূন্য হচ্ছে। শহর জমিয়ে রাখা সালেহ ভাইরা বিদায় নিয়ে অনন্তলোকে যাত্রা করেছেন। সালেহ ভাই রাজনীতির পাশাপাশি নাটকের মানুষ ছিলেন। আবুল হোসেন মিলনায়তনে হল ভর্তি দর্শককে অভিনয়ে মুগ্ধ করেছেন। শাহ আব্দুল করিম, রাধারমণ দত্ত এর ভক্ত ছিলেন তিনি। আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শহরে নাটকের উদ্যোগ নিলে সালেহ ভাই অভিভাবকের দায়িত্বে থাকতেন। লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিতেন। শহরের অনেক পুরনো ঘটনা তাঁর স্মৃতিতে সতেজ থাকত। দীর্ঘদিন থেকে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন উকিলপাড়ার মমতা আপাকে। মমতা আপাও দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে কয়েক বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। মমতা আপার মৃত্যুর পর হঠাৎ একদিন সালেহ ভাই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তারপর আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি। কয়েক বছর অসুস্থতার পর আজ চিরদিনের জন্য চলে গেলেন।
শহরের সব সাহসী অগ্রজরা চলে যাচ্ছেন একে একে। লুঙ্গি আর সাদা পাঞ্জাবি গায়ে দীর্ঘদেহী সালেহ ভাইকে শহরের কোথাও আর পাওয়া যাবে না। অনন্তলোকে আপনার যাত্রা শান্তির হোক সালেহ ভাই। আপনি এবং আপনার আগে চলে যাওয়া আপনার বন্ধুদের কাছ থেকে অনেক স্নেহ পেয়েছি। পরম করুনাময় আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুন।
উনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। দয়াময় আল্লাহ তাঁর আদরের দুই মেয়ে সহ ভাই -বোন এবং পরিবারের সদস্যদের শোক সইবার ক্ষমতা দিন।
লেখক : সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ (ফেসবুকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া)