অনন্য নান্দনিক উন্নয়নে সমৃদ্ধ বিশ্বম্ভরপুর

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় স্থানীয় উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে নির্মিত মাল্টিপারপাস সেন্টারটিকে একটি সৃজনশীল উদ্যোগ হিসাবে আমরা মনে করছি। উপজেলা পরিষদের সামনে করচার হাওরের পাড়ে দেড় একর জায়গা নিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে কম্পিউটার ক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরি, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, হস্তশিল্পের ডিসপ্লে সেন্টার, শিশু একাডেমি, ইনডোর শিশুপার্ক, বিউটি পার্লার, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট, মার্কেট প্লেস, মিনি এম্ফিথিয়েটার প্রভৃতির সুবিধা রয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়। এক জায়গার এতগুলো সুবিধার সমাহার ঘটিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। সফলভাবে এই সেন্টারটি ব্যবহার করা গেলে এটির আরও বহুবিধ সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
গত বছর দুয়েক যাবৎ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নিরবে বিশাল এক পরিবর্তনযজ্ঞ বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে বলে আমরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছি। বিশেষ করে বর্তমান তরুণ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যোগদানের পর থেকে তাঁর হাত ধরেই এইসব কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদার, সুরূচিবোধসম্পন্ন, দূরদৃষ্টির অধিকারী, সৃজনশীল ও কর্মপাগল একজন সরকারি কর্মকর্তা। একজন সরকারি কর্মকর্তা সদিচ্ছা প্রসূত হলে কী কী করতে পারেন, চোখের সামনে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা তার জলজ্ব্যান্ত উদাহরণ। তিনি এই উপজেলার ািবভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থানকে এমন সুন্দরভাবে সাজিয়েছেন যা দুই বছর আগে কারও কল্পনাতেও আসেনি। একদা অপরিচ্ছন্ন, নিরাভরণ ও নিষ্প্রভ উপজেলা সদরটি এখন নানা স্থাপনায় সমৃদ্ধ হয়ে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় সকলকে কাছে টানছে। স্বল্প খরচে কোনো স্থানকে দৃষ্টিনন্দন কী করে করা যায় তা বিশ্বম্ভরপুরের নানা স্থাপনা দেখলে বুঝা যায়। এর পিছনে আর্থিক বরাদ্দের চাইতেও বেশি ভূমিকা রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নান্দনিক ও ইতিবাচক মানসিকতা। কারণ সকল উপজেলায়ই কমবেশি একই ধরনের সরকারি বরাদ্দ আসে । কিন্তু বহু উপজেলা রয়েছে যেগুলোতে বিশ্বম্ভরপুরের অনুরূপ কোনো শিল্পসম্মত উন্নয়নের ছুঁয়া দেখি না আমরা। তাই এই উপজেলা অন্যদের জন্য অনুসরণের বিষয় হতে পারে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য ফিল্ড স্টাডির একটি শিক্ষণীয় অঞ্চল হতে পারে এই উপজেলা।
আমাদের দেশে উন্নয়ন কাজের স্থায়িত্বশীলতার বিষয়টি খুব জুৎসই নয় বলে দেখা যায়। আজ একজন রূচিশীল কর্মকর্তার উদ্যোগে উপজেলাটি যে মনোহর রূপে সেজেছে সেটি তিনি না থাকলেও সমান সজ্জিত থাকবে কিনা সে নিয়ে যুক্তিসঙ্গত কারণেই আমাদের ভিতর একটি দুশ্চিন্তা কাজ করে। ব্যক্তির সাথে যদি উন্নয়ন কাজগুলো সিস্টেমের আওতায় পরিচালিত হওয়ার সংস্কৃতি তৈরি করা যেত তাহলে পুরো দেশের চেহারা এতদিনে পালটে যেত। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাল্টিপারপাস সেন্টার পরিচালনা বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, একটি কমিটি এটি পরিচালনা করবে। এই সেন্টারের স্থায়িত্বশীলতার জন্য সরকারি আদেশবলে একটি স্থায়ী কাঠামো ও নীতিমালা তৈরি করা দরকার বলে আমরা মনে করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহযোগে উপজেলা পরিষদই এর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া যেসব সুবিধাদি এখানে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলো যাতে সবসময় সচল থাকে সেজন্য তদারকি ব্যবস্থাকে জোরদার রাখতে হবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্যকর সমন্বয়ের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলার অন্যান্য নান্দনিক স্থাপনাগুলোর বিষয়েও একই ধরনের পদক্ষেপ কাম্য। যদি পরিচর্যার অভাবে ভবিষ্যতে এইসব স্থাপনা অনাদর অবহেলায় ¤্রয়িমান হয়ে পড়ে তাহলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সকলেই ব্যথিত হবেন।
কর্মদ্যোগী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিশ্বম্ভরপুরকে আমাদের অভিনন্দন। তিনি এরকমই গণবান্ধব, রূচিশীল থাকুন। একই সাথে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদকেও আমরা অভিনন্দন জানাই। শুধু একটাই অনুরোধ, এইসব নির্মিতিকে ভবিষ্যতে রক্ষা করে চলতে হবে এবং এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আরও নানা ধাপের উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে। নান্দনিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য বিমোচনের দিকে অগ্রসর ও লক্ষ্যাভিমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও তাঁদের প্রতি আমাদের অনুরোধ।