অনুপস্থিতির সকল রেকর্ড অতিক্রম

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়ে বের হচ্ছিল মেহেদী হাসান তামিম। পরীক্ষা কেমন হলো জিজ্ঞেস করতেই বললো, ‘চার বিষয়ের বই নেই, সেই বিষয়গুলোর প্রস্তুতিও নেই, ওইগুলোর পরীক্ষা কিভাবে দেব এই চিন্তায় আজকের পরীক্ষায় মনোযোগ দিতে পারি নি।’ মেহেদী শহরতলির শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সে দেখার হাওরপাড়ের ইছাগরি গ্রামের জাফরান মিয়ার ছেলে।
মেহেদী জানালো, ১৬ জুন সন্ধ্যায় ঘরে পানি ঢুকলে, বই টেবিলের উপর রেখে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল তারা। কিন্তু গভীর রাতে ঢলের পানি ঢুকে গলা সমান পানি হয় ঘরে। টেবিলের উপরের বইগুলোও পানিতে ডুবে যায়। এরপর অনেক চেষ্টা করেও বইগুলো শুকিয়ে পড়ার উপযোগি করা যায় নি।
একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাইমুল কবিরের বাংলা বই ছাড়া সবগুলো বই বন্যায় ডুবেছিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভির আহমদের তিন বিষয়ের বই নেই। বন্যায় ডুবে নষ্ট বই শুকিয়েও কাজ হয় নি। নতুন বইও পায় নি।
তিন শিক্ষার্থীই জানালো, বন্যার পর অনেকদিন অন্যত্র ছিল তারা। স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। স্যারদের বইয়ের বিষয়টি জানাতে পারে নি। যখন জানিয়েছে, ওই সময় আর স্যাররাও বই দিতে পারেন নি।
সরকারি জুবিলী কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বে থাকা শান্তিগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সচীন্দ্র দেব নাথ বললেন, শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তিনবার চাহিদা সংগ্রহ করা হয়েছে। দফায় দফায় সরকারের পক্ষ থেকে বইও দেওয়া হয়েছে। যারা চাহিদা দেয় নি। তারা বইও পায় নি। এরকম সংখ্যাও একেবারে কম। বন্যায় নষ্ট হওয়া প্রায় সকলেই নতুন বই পেয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ভয়াবহ বন্যার রেশ ছিল সুনামগঞ্জের সবকয়টি কেন্দ্রের এসএসসি পরীক্ষায়। এবার এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা ছিল অন্য বছরের চেয়ে বেশি। জেলায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪০৮ জন। গেল বছরের এসএসসি পরীক্ষায় মাত্র ৩০ জন অনুপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জের ৩৩ কেন্দ্র ও ৩৭ ভেন্যুতে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ২২ হাজার ৮৪৭ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ছিল ২২ হাজার ৫৭২ জন। অনুপস্থিত ছিল ২৭৫ জন। দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল তিন হাজার ৫২৩ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ছিল তিন হাজার ৪১৭ জন। অনুপস্থিত ১০৬ জন। ভোকেশনাল পরীক্ষায় সাত কেন্দ্র ও দুই ভেন্যুতে পরীক্ষার্থী ছিল ১১৬০ জন। উপস্থিত ছিল ১১৩৩ জন, অনুপস্থিত ২৭ জন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি সুনামগঞ্জ শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা বললেন, বন্যায় অনেকের বইপত্র নষ্ট হয়েছে। বসতঘরও গেছে। কেউ কেউ এলাকায়ই নেই। আমার স্কুলের একজন শিক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড নেয় নি। তাকে বহুবার ফোন দেওয়া হয়েছে। ফোন রিসিভ করে নি। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের আট মাস পর পরীক্ষা হওয়ায় অনেকে পড়াশুনা ছেড়ে রোজগারে নেমেছে। ছাত্রীদের কারো কারো হয়তো বয়স বাড়িয়ে গোঁপনে অভিভাবকরা বিয়ে দিয়েছে। আমার ভেন্যুতে এই বছর ছেলে সাত এবং মেয়ে দুই জন অনুপস্থিত ছিলো। ভেন্যু হবার পর এভাবে কেউ দেখেনি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমও একই ধরণের মন্তব্য করলেন।