স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জে করোনা মহামারিরোধে শুরু হওয়া ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রমের চতুর্থ ডোজের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রথম থেকে তৃতীয় ডোজ পর্যন্ত টিকা দিতে মানুষের মাঝে যেভাবে আগ্রহ ছিলো, চতুর্থ ডোজ নেবার সময় থেমনটা নেই। এখন পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৭ হাজার মানুষ চতুর্থ ডোজ টিকা নিয়েছে। টিকা কেন্দ্রের স্বল্পতা ও দুরত্ব এবং প্রচারের অভাবেই চতুর্থ ডোজ নিতে মানুষের সাড়া নেই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যে মতে, জেলার মোট জনসংখ্যার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২৮.৮৪ ভাগ, দ্বিতীয় ডোজ ৭৮.৪১ ভাগ, তৃতীয় ডোজ ৪০.৫৩ ভাগ। চতুর্থ ডোজ নিয়েছেন মাত্র ০.২৭ ভাগ, যা পরিমাণে দাঁড়ায় ৭৩৪৭ জন। সারাদেশে গেল বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে চতুর্থ ডোজ দেয়া শুরু হলেও এখনও সুনামগঞ্জে তৃতীয় ডোজ নেয়া বেশিরভাগ মানুষ চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিনের আওতায় আসেন নি।
রোববার বেলা সাড়ে ১১ টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে শহরের ষোলোঘর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (৭৫) এসেছিলেন চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নিতে। ভ্যাকসিন প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা কম হওয়ায় বেশিক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় নি তাকে। হাসপাতালে গিয়ে নিবন্ধন করা ও ভ্যাকসিন নেয়া শেষ করেছেন মাত্র ২ মিনিটে। এতো সহজেই ভ্যাকসিন নিতে পেরে খুশি তিনি।
বললেন, খুবই ভালো লেগেছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ নিতে গিয়ে অনেকক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা লেগেছে। অনেক ভোগান্তি হয়েছে। কারণ আগের তিন ডোজ নেবার জন্য আগ্রহী ছিলেন বেশি মানুষ। এবার বেশি মানুষ নেই।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ভ্যাকসিন নিতে আসা পরিমল চন্দ্র চন্দ, শাওন সরকার ও জুবায়েল আল মামুনেরও একই মন্তব্য। তারা বললেন, আগে ভ্যাকসিন দেয়ার সময় যেরকম প্রচারণা করা হয়েছে, এবার সেরকম হয় নি। আগে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা করেছেন। এবার একদম এমনটি নেই। তাই চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ কম।
চতুর্থ ডোজের বেলায় শহরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও খারাপ। উপজেলার ৯ টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীর সংখ্যা কম। এতে হাওরাঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী টিকার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন, শনিবার তাহিরপুরে চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ২৭ জন। আগে যেরকম মানুষের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ ছিলো এবার নেই। এতে বেশিরভাগ মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসছে না। তিনি মনে করেন, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে চতুর্থ ডোজ দেবার ব্যবস্থা করা গেলে বেশি মানুষ ভ্যাকসিনের আওতায় আসতো।
দিরাইয়ের বাসিন্দা হিরন্ময় দাস বলেন, আগের মতো প্রচারনা এখন নেই। করোনা ভাইরাস নিয়ে আগে মানুষের যেরকম ভয় ছিলো, এখন সেভাবে নেই। মানুষ মনে করে ‘ নলে ভালো, না নিলেও চলবো’। তাই মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, আগের মতো স্বাস্থ্য বিভাগেরও প্রচারণা নেই। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ দেবার সময় মাইকিং করা হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রে মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছে। এখন সে সুবিধা নেই। পুরো উপজেলায় মাত্র একটি কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়। গ্রাম থেকে খরচ করে উপজেলা সদরে ভ্যাকসিন নেবার সামর্থ্য অনেকের নেই। তাই মানুষের আগ্রহ কম।
শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুল হাই জানেন না ভ্যাকসিনের চতুর্থ ডোজ শুরু হয়েছে কি-না! তিনি এই প্রতিবেদককে বললেন, আমরা তৃতীয় ডোজ দিয়েছি। চতুর্থ ডোজ এখনও শুরু হয় নি।
চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে জানালে, তিনি বলেলন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হয়েই জানি না, সাধারণ মানুষ কিভাবে জানবে?’ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যাকসিন খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এখন মানুষের মাঝে চতুর্থ ডোজ দেবার প্রচারণা করা না গেলে জানবে না তারা। এতে হাওর এলাকার সাধারণ মানুষ টিকা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকবে বলেই মন্তব্য এই ইউপি সদস্যের।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন আহম্মদ হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তি তৃতীয় ডোজ নেবার পর চার মাস পরে চতুর্থ ডোজ নিতে পারে। তবে চতুর্থ ডোজ নিতে মানুষের তেমন আগ্রহ পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার পর্যন্ত পুরো জেলায় ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ৭ হাজার ৩৪৭ জন।
মানুষের মাঝে আগ্রহ নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন জেলায় সদর হাসপাতালে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা দেয়া হচ্ছে। আগের ডোজগুলো দেবার সময় যেরকম কার্যক্রম করা হয়েছে, এবার সেরকম করলে সাড়া পড়তো। অন্তত ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা কেন্দ্র করলে মানুষ ভ্যাকসিন নিতে আসতো।
- স্ত্রীকে কুপিয়ে স্বামীর আত্মহত্যা
- যুদ্ধ জয়ের নানা গল্প শুনলেন শিক্ষার্থীরা