ইউএনরও কার্যালয়ের সামনে যুবকের আত্মহননের চেষ্টা

ধর্মপাশা প্রতিনিধি
গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর না পেয়ে ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে নিজের গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন মো. মান্না নামে এক যুবক। মঙ্গলবার দুপুরে ইউএনওর কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অন্তত ১০/১২ জন মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে ইউএনও সাথে সাথে মো. মান্নাকে একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ততক্ষণে এ ঘটনার ছবি সংরক্ষণ করেন অনেকেই।
উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে মো. মান্না দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তিনি একজন মুজিবভক্ত। তিনি পরিপাটি পোশাক ও চকচকে সু-জুতা করে ইজিবাইজ চালানোয় হঠাৎ দেখে তাকে বুঝার উপায় নেই যে তিনি একজন ইজিবাইক চালক। তিনি হৃদয়ে ধারণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ। রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিসহ জাতীয় দিবসগুলোতে তাঁর সরব উপস্থিতি। কখনও স্থানীয় বঙ্গবন্ধু চত্বরে আবার কখনও উপজেলা পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধু মোড়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে দিতে থাকেন বক্তব্য। কেউ কেউ আবার তাঁঁর এই বক্তব্য ছড়িয়ে দেন ফেসবুকে। স্থানীয়দের কাছে তাঁর এমন কর্মকান্ড ‘পাগলামী’ বলে আখ্যায়িত হলেও তিনি তাঁর ইজিবাইকে আওয়ামী লীগ সরকারের ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে একটি ব্যানারও সাঁটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে একটি সরকারি ঘরের জন্য ইউএনওর দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে মান্না তার মায়ের আইডি কার্ডের প্রতিলিপিও ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছেন। আর মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে মান্না ইউএনর কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তার বা তার মায়ের নামে কোনো ঘর বরাদ্দ হয়নি। ফলে মান্না ইউএনওর কার্যালয়ের দরজার সামনে গিয়ে শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে গায়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা আনসার সদস্য তোফাজ্জলসহ অনেকেই মান্নাকে তার গায়ে আগুন লাগানো প্রতিরোধ করেন। পরে ইউএনও মান্নাকে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দেন।
মো. মান্না বলেন, ‘উনি (ইউএনও) শুধু দেখছি দেখছি বলেছেন। তাই আমি সিরিয়াস হয়েছি। এখন আবার ঘর দিবেন বলেছেন।’
সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন বলেন, ‘মান্না অসহায় ও ভূমিহীন একজন মানুষ।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, ‘মান্নার বাড়ি সুখাইড় দক্ষিণ ইউনিয়নে। সে সদর ইউনিয়নে ঘর চেয়েছে। এখন তাকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঘর করে দেওয়া হবে।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি, যা দুঃখজনক। মুজিবভক্ত মান্না ও তার পরিবারের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হবে।’