ফ্লোরের উপর শাবল দিয়ে চাপ দিতেই সিমেন্ট-বালুর আধা ইঞ্চি আস্তরণ উঠে গেল। ফ্লোরে কোনো ইট ব্যবহার করা হয়নি। মাপজোঁক করে ঘরের উচ্চতাও কম পাওয়া যায়। এই বর্ণনা দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুরে নির্মাণাধীন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের কয়েকটি ঘরের। স্বয়ং জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার সরেজমিন পরিদর্শনকালে এই দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন। এই গ্রামেই এর আগে (সাবেক জেলা প্রশাসকের সময়ে) এই প্রকল্পেরই কিছু ঘরের লিন্টেলে কোনো রডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। লিন্টেলের বাহির দিকে চার টুকরা রড রাখা হয় যাতে দেখে মনে হয় ভিতরেও রড রয়েছে। আজমপুরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১০৯টি ঘর নির্মিত হচ্ছে। এই হচ্ছে মাঠের বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল গৃহহীনদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী সারাক্ষণ দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য দিনরাত চিন্তা-ভাবনা করেন, কাজ করেন এবং বিভিন্ন প্রকল্প-কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও জীবিকার ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর এই সদিচ্ছাকে মাঠ পর্যায়ে কেমন করে নষ্ট করা হয়ে থাকে উপরের ঘটনাটি এর ছোট একটি প্রমাণ মাত্র। প্রায় জায়গা থেকেই উপহারের এইসব ঘর নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। এরমধ্যে প্রধান একটি অভিযোগ হলো, ঘর পাইয়ে দিতে উপকারভোগীদের নিকট থেকে অনৈতিক ও অবৈধভাবে টাকা গ্রহণ করা। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালীরা এইসব কাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এমন অপকর্ম করে থাকেন বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা আছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, নাটোরের গুরুদাশপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার কথা বলে অসহায় ৭ নারীর কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরৎ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে রক্ষা করেছেন ওই উপজেলার ইউএনও।
উপহারের ঘর যাঁরা পেয়ে থাকেন তাঁরা সমাজের একেবারে হতদরিদ্র শ্রেণির লোকজন। এঁদের নিকট থেকে টাকা নেয়া বা কাজে অনিয়ম করে অর্থ আত্মসাৎ করার মতো নি¤œরূচির কাজ করতে এখন একটুও দ্বিধা করা হয় না। যাঁরা এই দুর্নীতি করে তাঁরা পরিচয়ে সমাজসেবক, রাজনীতিক বা ভদ্রস্ত কোনো পদ-পদবি ধারণ করে এইসব অপকর্ম করেন। দুর্নীতি-অনিয়মের সর্বগ্রাসী চরিত্র কোথায় গিয়ে নেমেছে দরিদ্রদের বরাদ্দ থেকে লুণ্ঠন প্রবৃত্তি থেকে তা উদোম হয়ে পড়ে। এই যখন আমাদের গণমানসিকতা তখন একজন প্রধানমন্ত্রীর নিরন্তর প্রয়াস কেমন করে পূর্ণতা পেতে পারে?
অথচ এইসব কাজ বাস্তবায়ন, তদারকি ও দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন বিশাল বহরের সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারি। তাঁদের অনুকূলেই অর্থ বরাদ্দ হয় এবং তাঁরাই বাস্তবায়নের পদ্ধতিগত ধাপগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। কোনো কাজে যখন অনিয়ম হয় তখন এইসব পদাধিকারীরা নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তাঁদের সহযোগিতা ও আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া এরকম অনিয়ম কখনও হতে পারে বলে কেউই বিশ্বাস করবে না। কেন তাঁরা এইসব অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন? এর সরল কারণ হলোÑ বরাদ্দের লুণ্ঠিত অংশের ভাগও যথারীতি যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হয়। অর্থাৎ যারা কাজ করেন সেই প্রকল্প কমিটি বা ঠিকাদার আর বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ তখন হরিহর আত্মায় পরিণত হয়ে যায়। সংবাদপত্রে এইসব অনিয়মের সাথে জড়িতদের অনেক ঠিকানা ঠিকুজি প্রকাশ হতে দেখা যায়। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের খবর কি কখনও মিলে? কখনও না। এই কারণেই দুর্নীতি ও অনিয়ম বিশাল বিস্তৃত হতে পারছে। এই কারণেই ‘রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি’ এর বাস্তবতা দূর হওয়ার আপাত কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়।
দোয়ারাবাজারের যে অনিয়মগুলো স্বয়ং জেলা প্রশাসক দেখলেন, আমরা অপেক্ষায় থাকলাম, এ বিষয়ে তিনি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন তা দেখার। জেলা প্রশাসক বলেছেন, উপহারের ঘর উপহারের মতোই হতে হবে। আমরা এই কথার সার্থকতা দেখতে চাই।
- দোয়ারায় বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধন
- মধু মাসের মৌতাত