এইচএসসি উত্তীর্ণদের অভিনন্দন/ এই ফলাফল কি শিক্ষার মান নিশ্চিত করার সহায়ক?

করোনা মহামারীর জন্য গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছিলো। এবার পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। বৃহষ্পতিবার একযোগে প্রকাশিত এইচএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার পাসের হার ৮৪.৩১ শতাংশ (সাধারণ ৯ বোর্ডে) এবং মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫ জন। গতবছরের চাইতে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। পক্ষান্তরে গতবারের চাইতে জিপিএ ৫ কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন। জাতীয়ভিত্তিক এই ফলাফলের ধারা অনুসারে আমাদের জেলা সুনামগঞ্জেও এবার পাসের হার কমেছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবছর যেখানে জেলার পাসের হার ছিলো ৯৪ দশমিক ১৩ শতাংশ সেখানে এবার পাসের হার নেমে এসেছে ৮২.৮৫ শতাংশে। তবে সুখের কথা হলো জাতীয়ভাবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেলেও সুনামগঞ্জে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩০ জন। এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী। এরকম ফলাফল প্রত্যাশিতই ছিলো। কারণ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের চাইতে পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করার ফলে ফলাফল যে কিছুটা হ্রাস পাবে তা পূর্বঅনুমিতই ছিলো। সুতরাং সার্বিকভাবে প্রকাশিত ফলাফলকে খারাপ বলার অবকাশ নেই। বিশেষ করে গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের প্রায় সকল পরীক্ষার্থীই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, বই-খাতাপত্র নষ্ট হওয়া, আবাস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানাভাবে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিকে বিঘিœত করেছে। এত বড় বন্যার ধকল কাটিয়ে পরীক্ষার্থীরা যে নিজেদের প্রস্তুত করতে পেরেছিলেন সেটি বড় কথা।
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ ও ফলাফল প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে এই শিক্ষার্থীদের মৌলিক সাধারণ শিক্ষা গ্রহণের কাল শেষ হলো। শিক্ষার্থীরা এখন উচ্চশিক্ষার স্তরে প্রবেশ করবেন। এজন্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকেই তারা প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একদিন বিশ্রাম না নিয়েই বেশির ভাগ ভর্তি হয়ে গেছেন বিভিন্ন ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠানে। কোচিং প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রমরমা কোচিং বাণিজ্য করার সুযোগ পায়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও পতঙ্গের মতো এই কোচিং কূপে ঝাঁপ দেন। তবে সকলে প্রত্যাশিত জায়গায় ভর্তির সুযোগ পাবেন না বলেই ধারণা করা যায়। সারা দেশে যে সংখ্যক জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের ধারণ করার মতো সিট নেই দেশের ভালো মানের পাবলিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এদের কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে। আর কিছু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হবে। তবে নানা কারণে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের শিক্ষা জীবনের ইতিও টানতে হবে হয়তো।
মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কথা শুনে থাকি। সাধারণত এইচএসসি’র ফলাফল দেখে বুঝার উপায় থাকে না যে জিপিএ ৫ পাওয়ার মধ্য দিয়ে এই শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছেন কিনা। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এদের অনেকেই অকৃতকার্য হয়ে থাকেন। অথচ একই পাঠবইয়ের আলোকেই ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। শিক্ষার মাধ্যমে জাতির মেধাস্তর বিকশিত হয় এবং প্রতিযোগিতামূলক ও জ্ঞানভিত্তিক বিশ্বে নিজেদের অবস্থা সংহত করার সুযোগ পাওয়া যায়। আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এরকম মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি কিনা, প্রতিবছরই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর সেই প্রশ্নটি জোরালোভাবে সামনে আসে।
এবার যারা কৃতকার্য হয়েছেন তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা আশা করি এই শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই দেশকে নানা দিক দিয়ে উন্নত করার সুযোগ পাবে।