এক ছটাক ধানও কেনা হয়নি ৮ উপজেলায়

বিশেষ প্রতিনিধি
খাদ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি ধান ক্রয় উদ্বোধন করেছেন গেল সাত মে। উদ্বোধনের আট দিন পরও জেলার আট উপজেলায় এক ছটাক ধানও কেনা হয় নি। জেলার বড় উপজেলা ধর্মপাশায় এখনো ধান কেনার জন্য লটারীই হয় নি। এ কারণে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রয় করে ঠকছেন।
জেলায় এবারের বোরো মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন ধানের উৎপাদন হয়েছে। সরকার কিনবে মাত্র ১৭ হাজার ৪৮৩ টন ধান। সরকারি খাদ্য গোদামে ধান যে পরিমাণই কেনা হোক, ওখানে ধান কেনা শুরু হলেই হাওরজুড়ে ধানের ন্যায্য দাম পান কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবার জেলার সাত উপজেলায় ধান কেনা হবে। এই সাত উপজেলায় এখনো ধান কেনার জন্য কৃষক বাছাইয়ের কাজ শেষ হয় নি। কৃষি অ্যাপে আবেদনেও কৃষকের আগ্রহ কম।
রবিবার পর্যন্ত জেলার তাহিরপুরে ১০৭৬, জামালগঞ্জে ১৩০৯, দিরাইয়ে ৮২২, ছাতকে ১০৮, দোয়ারাবাজারে ৩৮৪, সুনামগঞ্জ সদরে ৭৯৬ জন এবং শান্তিগঞ্জে কোন কৃষকই আবেদনই করেন নি।
সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়া উপজেলায় জামালগঞ্জ উপজেলা ভখদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাহাব উদ্দিন জানালেন, ধান দেবার উপযোগী কৃষক আছেন ৩৫ হাজারের মত কৃষক। তাহলে আবেদন এতো কম হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বললেন, আবেদন করা কেবল শুরু হয়েছে, কৃষকরা পর্যায়ক্রমে আসতেই থাকবেন।
এই উপজেলার গণমাধ্যম কর্মী ওয়ালি উল্লাহ্ সরকার জানালেন, কৃষিঅ্যাপে ধান বেচার আবেদন দেওয়াকে ঝামেলা মনে করছেন কৃষকরা। এজন্য কৃষকরা এবার গোদামমুখী হচ্ছেন না। ১২শ’ টাকার ধান ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা মণে ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করছেন। তিনি জানালেন, কৃষক নিবন্ধনকার্ড করার পর পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন অনেকে। আবেদনে দেওয়া মোবাইল নম্বরও ভুলে গেছে। এ কারণেও অনেকের সমস্যা হচ্ছে। খাদ্য গোদামে এসব সমস্যা নিয়ে কৃষকরা আসলে, কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল নম্বর সঠিক না হলে কিছুই করার নেই। এক কৃষকের বা এক ভোটার আইডি কার্ডে দুইবার অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে না।
দিরাই উপজেলার রাজানগরের বড় কৃষক আব্দুস ছাত্তার বললেন, ‘অনলাইনে আবেদন করা ঝামেলা মনে করছেন কৃষকরা। এজন্য এবার খাদ্যগোদামমুখী কৃষক কম। খাদ্য গোদামে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় বাজারেও ধানের দর ধীরে ওঠছে। অনেক কৃষক ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা মণে ধান বিক্রয় করে ঠকছেন।
জামালগঞ্জের হঠামারার বড় কৃষক আব্দুল হেকিম বললেন, ‘ গোডাউনে ধান দিতে কী লাখান (কিভাবে) আবেদন করা লাগে আমি জানিঔনা (জানি না), পানি অইলে (হলে) ধান নিয়া মধ্যনগর বেচমু (বিক্রয় করব)।’
জেলার প্রায় পৌঁনে চার লাখ কৃষক থাকলেও অনেকের কৃষিঅ্যাপে নিবন্ধন নেই। জেলা খাদ্য অফিসের দেওয়া তথ্য মোতাবেক সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় নিবন্ধনকৃত তিন হাজার ৭৬১ কৃষকের মধ্যে ৭৯৬, তাহিরপুরে দুই হাজার ৭৮৯ কৃষকের মধ্যে এক হাজার ৭৬, জামালগঞ্জের আট হাজার ৫৭৬ কৃষকের এক হাজার ৩০৯, দিরাইয়ের দুই হাজার ৬৮৬ কৃষকের মধ্যে ৮২২, ছাতকে ২৮৯ কৃষকের মধ্যে ১০৮, দোয়ারাবাজারে ৪৭৯ জন নিবন্ধনকৃত কৃষকের মধ্যে ৩৮৪ জন ধান কিনতে আবেদন করেছেন। এছাড়া শান্তিগঞ্জে নিবন্ধনকৃত ৭৬২ জন কৃষকের মধ্যে কেউ-ই ধান কেনার জন্য আবেদন করেন নি।
জগন্নাথপুরে মাত্র ১৫৪৮ জন কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে ধান কেনার আবেদন করেছেন। লটারীতে নির্বাচিত হয়েছেন ৫১৮ জন। রবিবার পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে ৮১ টন। শাল্লায় আবেদনকারী ১১৩৯ কৃষকের সকলেই ধান দিতে পারবেন। রবিবার পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে ২৪ টন। ধর্মপাশায় ১৪ হাজার ৮৮৯ কৃষক ধান কেনার জন্য আবেদন করেছেন। রবিবার সকাল পর্যন্ত এ উপজেলায় লটারীই হয় নি। বিশ^ম্ভরপুরের আবেদনকারী ১৫৬৫ কৃষকের মধ্যে ২৬৭ কৃষক লটারীতে টিকেছেন। রবিবার পর্যন্ত নয় টন ধান কেনা হয়েছে এই উপজেলায়। এছাড়া উদ্বোধনী দিনে সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর খাদ্য গোদামে ভার্চুয়ালি খাদ্যমন্ত্রী ১৮ টন ধান কিনে কেনা উদ্বোধন করেছিলেন এবং মধ্যনগর খাদ্য গোদামে তিন টন ধান কেনা হয়েছে।
তবে জেলায় চালের ৯ হাজার ৬৭৬ টনের মধ্যে মল্লিকপুর খাদ্যগোদামে রবিবার সকাল পর্যন্ত ৬৭২ টন কেনা হয়ে গেছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ভূঞা অবশ্য বলেছেন, তারা লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক ধান চাল কিনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে জেলার কিছু উপজেলায় জোরেশোরে ধান কেনা চলছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে কৃষিঅ্যাপে আবেদনকারীদের মধ্যে লটারী করে সকল উপজেলায় ধান কেনা শুরু হবে।