মধ্যনগর প্রতিনিধি
‘বিরিজডা (ব্রীজ) অওনে (হওয়ায়) আমরার কপাল খুলছে। আগে ফসলাদি মইষখলা (মহেষখলা) বাজারোই বেচন (বিক্রয় করা) লাগত। দাম পাইতাম না। অহন ঢাহাইয়া (ঢাকাগামী) গাড়িত কইরা হেই কাওরান বাজারো ফসলাদি হাডানি (পাঠানো) যাইবো। ভালা দামও হাইয়াম (পাব)। এই বিরিজে আমরার গিরস্থিও (গৃহস্থির) মান বাড়াইছে।’
সেতুর পূর্বপাশে চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে কথাগুলো বলছিলেন কালাগড় গ্রামের যুবক সুজন মিয়া।
মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কালাগড় গ্রামের পাশদিয়ে বয়ে চলা মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহিষখলা নদী। স্থানীয় লোকজনের মাঝে এই নদী রঙ্গাছড়া নামে পরিচিত। এই নদীর ওপর নির্মিত ছোট্ট সেতুটি বদলে দিয়েছে লাখো মানুষের ভাগ্য। আর এতেই সীমান্তবর্তী এ জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের এক নতুন দিগন্ত।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সাড়ে ১৬ কোটি টাকার অর্থায়নে ৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু নির্মাণের কাজ পায় মোজাহের এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছ। সেতুর পূর্বপাড়ে জেলার মধ্যনগর উপজেলা পশ্চিম পাড়ে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়ন। গত ঈদ উল ফিতরের পর থেকে এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল শুরু করেছে রাজধানী ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সহ ছোট বড় শতশত যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কালাগড় থেকে এই সেতুর উপর দিয়ে ৫-৬ টি ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এসব বাসে প্রায় কমবেশি তিন শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ ও মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ, বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের লাখো মানুষ এই সেতুর বদৌলতে যোগাযোগের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এতে সীমান্তের জনজীবনে যোগাযোগ দুর্ভোগের অবসান ঘটেছে।
সেতুর উপকারভোগী সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের প্রধান খাত হলো কৃষি। এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারনে মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজার দরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করত। এখন কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বৃহত্তম বাজারে সরবরাহ করতে পারছেন।
ঢাকাগামী বাসের যাত্রী তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, একসময় আমরা ঢাকায় যাওয়ার জন্য পাঁচ-সাতশো টাকা ভাড়া দিয়ে মোটর সাইকেলে করে কলমাকান্দা পৌঁছতাম। এখন আমরা দুইশো টাকায় মহিষখলা এসে এই সেতুর কাছ থেকে বাসে উঠে মাত্র সাড়ে চারশো টাকায় সরাসরি ঢাকা যেতে পারি। এতে আমাদের যেমন কষ্টের লাঘব হয়েছে, তেমনি যাতায়াত খরচও সাশ্রয় হয়েছে।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদা আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে মহিষখলা নদীর উপর নির্মিত সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, মহিষখলা নদীতে সেতু নির্মিত হওয়ায় তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, বাদাঘাট ইউনিয়নের জনগণ কমসময়ে, স্বল্প খরচে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারছে। পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়েছে। তবে বর্ডার রোডে কলাগাঁও থেকে বাগলী পর্যন্ত রাস্তায় এক কিলোমিটার পাকা করলে এই এলাকায় মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো দুর্ভোগ থাকবেনা।
বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরনবী তালুকদার বলেন, পণ্যবাহী যানবাহন সহ ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ সহজ হলো এবং খরচও কমেছে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় সওজের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি হাওরবেষ্টিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সীমান্তবর্তী জনপদের জন্য যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রুহুল আমিন খান বলেন, প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকায় জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয় নি। সীমান্তবর্তী জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তাদের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে এই সেতুটি বিশাল ভূমিকা পালন করবে।
- তেঘরিয়া লম্বাহাটি প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের উদ্বোধন
- ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পাঁচ শিক্ষা বোর্ডের রোববারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত