রাজধানীতে ডাচ—বাংলা ব্যাংকের সোয়া এগারো কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ডিবি পুলিশ কর্তৃক সুনামগঞ্জ থেকে চার অপরাধীকে গ্রেফতারের ঘটনাটি উদ্বেগজনক। এ থেকে বুঝা যায় একটি বড় অপরাধীচক্রের অস্তিত্ব রয়েছে সুনামগঞ্জে। এরা একটি দুর্ধর্ষ অপরাধ নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত হয়ে বড় বড় অপরাধ সংঘটন করে থাকে। সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ শহরের লম্বাহাটির সোনাই মিয়া, এনামুল হক বাদশা, বড়পাড়ার মিজানুর রহমান ও বদরুল ইসলাম। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এদের সকলেই পুরনো অপরাধী। ছোট—বড় নানা অপরাধকর্মের সাথে এদের সম্পৃক্ততা নানা সময়ে পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত সোনাই মিয়া চুরি, ছিনতাইসহ ৯ মামলার আসামী। গত ৫ বছরের বেশির ভাগ সময় তার কেটেছে জেলে। কয়েকদিন আগে এলাকার জিয়া নামের এক তরুণকে মারপিটের ঘটনার আসামি সে। এনামুল হক বাদশাও চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ ১৭ মামলার আসামি। তার যন্ত্রণায় অতীষ্ট হয়ে এলাকাবাসী কয়েক বছর আগে বাদশার পরিবারকে মহল্লা ছাড়া করেছেন। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধেও দস্যুতাসহ দুই মামলা আছে। বদরুল ইসলাম আরও ভয়ংকর অপরাধী। সে চার বছর আগে এলাকার সাইদুল হক নামের এক ব্যক্তিকে খুন করেছিল বলে অভিযোগ আছে। চুরির মামলায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল।
এই অপরাধীরা কুকর্মের দায়ে জেলে গেলেও পরে জামিনে বেরিয়ে এসে নতুন নতুন অপরাধ কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। গণমাধ্যমে প্রদত্ত প্রতিক্রিয়া থেকে জানা যায়, স্থানীয়রা খুশি থাকেন এরা জেলে থাকলে। অর্থাৎ সমাজে এবং সকল মানুষের কাছে এদের অপরাধী পরিচয় গোপন নেই। এইসব দাগী অপরাধী নির্দিষ্ট মামলার আসামি হওয়ার পরও কীভাবে জামিনে মুক্তি পেতে পারে সেটি এক বিশেষ প্রশ্ন বটে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরিতে কোনো দুর্বলতা থাকে কি—না সেটি বিবেচনাযোগ্য। জামিন পাওয়া নাগরিকের অধিকার বটে তবে ভয়ংকর প্রকৃতির অপরাধী যারা মুক্তভাবে সমাজে বিচরণ করলে সমাজের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাদের অবশ্যই বন্দী জীবনে রাখতে হয়। অপরাধীরা স্বাচ্ছন্দ্যে বাইরে থাকতে পারলে তারা কেন অপরাধ করতে ভয় পাবে? এই চার অপরাধী অতীতের অপরাধকর্মের কারণে উপযুক্ত সাজাপ্রাপ্ত না হওয়ার কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, এমন উপসংহার টানা অযৌক্তিক হবে না।
এই চার অপরাধী একটি ব্যাংকের টাকা ছিনতাইর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে। এদের আর কত সহযোগী এখনও এলাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে কেউ জানে না। এরা নিশ্চয়ই আরও বহু ব্যক্তিকে অপরাধকর্মে দীক্ষা দিয়েছে। সুতরাং চার অপরাধীর গ্রেফতারের মধ্য দিয়েই যে এই চক্রের বিষাক্ত নিঃশ্বাস থেকে সমাজ সংসার রক্ষা পেয়ে গেলো তা বলার কোনো সুযোগ নেই। বরং এদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সহযোগী সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা সকলের প্রত্যাশিত। ডাচ—বাংলা ব্যাংকের টাকা ছিনতাই ঘটনায় আইন—শৃঙ্খলা বাহিনী যেরকম দক্ষতা দেখিয়ে স্বল্পসময়ে পুরো চক্রকে আটক করতে সমর্থ হয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সকল অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা অনুরূপ তৎপরতা লক্ষ করি না। ইদানীং শহরে চুরির ঘটনা বেশ বেড়ে গেছে বলে আমরা দেখতে পাই। বিশেষ করে খালি বাসায় চুরির ঘটনা বাড়ছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অতিশয় দক্ষ ও যোগ্য আইন—শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে সক্ষম। আলোচ্য ঘটনা এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। এই ধরনের তৎপরতাই আমরা তােঁদর নিকট থেকে দেখতে চাই। তবেই না সাধারণ মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারবে। আমরা দাবি জানাই ব্যাংকের টাকা ছিনতাইর অভিযোগে সুনামগঞ্জ থেকে গ্রেফতার চার অপরাধীর সাথে সংযুক্ত অপর অপরাধীরাও চিহ্নিত হোক এবং আইনী প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হয়ে মানুষের স্বস্তির কারণ হোক।
- সুনামগঞ্জের গ্রেপ্তারকৃতরা চিহ্নিত অপরাধী
- ব্রিটিশ সোসাইটিতে ছড়িয়ে দিতে বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন-হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার