এমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ভবিষ্যতেও বজায় থাকুক

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চমৎকার নমুনা দেখা গেছে শনিবার জেলা সদরে। এদিন বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসূচী ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ কর্মসূচী ছিলো। কর্মসূচীগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত বিধায় পরিবর্তনের কোনো উপায় ছিল না। ছোট শহর সুনামগঞ্জ। দুই বড় দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী একই সাথে পারস্পরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পালন করার মতো পৃথক কোনো জায়গা তেমন নেই এ শহরে। এক দলের কর্মসূচীর সাথে আরেক দলের গা ছুঁয়াছুঁয়ি হয়েই যাবে। এ নিয়ে শনিবার শহরবাসী সকলের মাঝেই উৎকণ্ঠা ছিলো। নিরাপত্তা বাহিনীরও ছিলো বিশেষ সতর্কতা। গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তামূলক পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। স্বস্তির সাথে দিন শেষে দেখা গেল, উভয় দলই যার যার মতো কর্মসূচী পালন করেছে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই। উভয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে দায়িত্বশীল ভূমিকায় ছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগ শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ারে (ট্রাফিক পয়েন্ট) শান্তি সমাবেশ করেছে। পুরনো বাসস্টেন্ডে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচী শুরু করে হাছননগরের হুসেন বখত চত্ত্বরে গিয়ে শেষ করেছে। উভয় দলের কর্মসূচীতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে আসতে দেখা গেছে কর্মী সমর্থকদের। এসব মিছিলের কোনো কোনোটি অন্য দলের কর্মসূচীস্থলের পাশ দিয়ে গেছে। কিন্তু এতে তৈরি হয়নি কোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতি। বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন হওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষ দেখছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন হিসাবে। এই ধরনের সহিষ্ণু আচরণই জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট থেকে প্রত্যাশা করেন। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসারে রাজনৈতিক দল নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে সভা সমাবেশ করবে এটি খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এসব কর্মকা- জনজীবনকে ব্যাহত না করুক এটি সকলের প্রত্যাশা। সারা দেশে অতীতে আমরা অনেক রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি দেখেছি। গত দেড় দশকে রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরাট ধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে গেছে। কোনো দলের কর্মী সমর্থকই চায় না যে, কর্মসূচীর নামে দেশে অরাজক অবস্থা তৈরি হোক। মানুষ নিজেদের জীবন ও জীবিকাকে বন্ধ রেখে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী এখন আর পছন্দ করে না। ফলে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পুড়াওর মতো কর্মসূচীগুলো আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। আশার কথা হলোÑ জনগণের এই পরিবর্তনের বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোও আত্মস্থ করতে পেরেছে। পেরেছে বলেই আজ দেশে প্রবলভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচী আছে কিন্তু সেই অর্থে অশান্তি নেই। এই অবস্থা সামনের দিনগুলোতেও সমানভাবে অব্যাহত থাকুক তাই সকলের কামনা।
সুনামগঞ্জ সবসময় শান্তিপ্রিয় এবং সকল মত ও পথকে ধারণ করার মতো সমৃদ্ধ প্রজ্ঞাময় এলাকা। এখানে সরকারি-বিরোধী দলের সকলেই সকলের পরিচিত। দলের বাইরে সকলেই পরস্পরের বন্ধু-স্বজন-প্রতিবেশী-পরিচিত জন। এই ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারণে রাজনৈতিক বৈরিতা এখানে মাত্রা ছাড়ায় না। অন্যদিকে যারা রাজনৈতিক দলগুলোকে নেতৃত্ব দেন তাঁরাও বিশেষভাবে যোগ্যতাসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল। দলের সকল কর্মী সমর্থকও একইভাবে গণতান্ত্রিক আচার আচরণে অভ্যস্ত। আদর্শ বা নানা বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও তা কখনও পারস্পরিক সম্পর্ককে কলুষিত করতে পারে না। আমরা এই সহিষ্ণু রাজনীতি চর্চার সমৃদ্ধি কামনা করি। সামনের দিনগুলোতে সংগত কারণেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও বিরোধময় হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। সেই সময়েও আমরা জেলার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো ধরনের অশান্তি দেখতে চাই না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের বহুল চর্চা হোক, আসন্ন নির্বাচনে বিনা বাধায় যে যার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক; এরকম একটি সহনশীল পরিস্থিতি বজায় থাকুক। মনে রাখতে হবে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের যে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে তা যেনো কোন অবিমৃশ্য সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।