এস ডি সুব্রত
আরবী মুহাররম থেকে মহররম শব্দটি বাংলা ভাষায় এসেছে। মুহাররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। মহররম হচ্ছে হিজরী সনের প্রথম মাস যা সম্মানিত চার মাসের এক মাস। মহররম মাসের দশ তারিখে পবিত্র আশুরা পালিত হয়। আরবী আশারা থেকে আশুরা শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ হচ্ছে দশ। এ কারণেই এ মাসের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিনে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ।
শিয়া মতাবলম্বীরা কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে আশুরা পালন করে। এ দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়। এ দিনে তারা তাজিয়া মিছিল বের করে। মাতম ও শোকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইনে এ এসব অনুষ্ঠান অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে শিয়া সম্প্রদায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ দিনটি পালন করে থাকে। এই আশুরার দিনে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায়ের পথে শাহাদাতবরণ করেন। ৬৮০ খ্রীস্টাব্দ হিজরী ৬১ সালের দশ মহররম সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন হযরত ইমাম হুসাইন (রা.)। সত্যের পথে হযরত হুসাইন (রা.) এর এই আত্মত্যাগ বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। নিজের জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে দ্বীন ও উম্মতে মোহাম্মদী পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। অতীতের সব ঘটনা ছাপিয়ে ৬১ হিজরী ১০ মহররম এমন একটি দূঃখজনক ঘটনার অবতারণা হয়। এই জন্য এ দিনটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লাভ করে। কারবালার শোকাবহ স্মৃতি আজো মুসলমানদের বুক বিদীর্ণ করে। আশুরার সাথে যেন কারবালার ঘটনা একাকার হয়ে গেছে। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা থেকে মুসলমানরা শুধু শোকের আবহ লাভ করে না, জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার শিক্ষা লাভ করে। ইয়াজিদ ইবনে মোয়াবিয়া ছিলেন ইসলামের ঘোর শত্রু আবু সুফিয়ানের পৌত্র। ওহুদের যুদ্ধে রসুল (সা) এর চাচা হামজা শহীদ হলে হিন্দা নামের যে রাক্ষুসী তার লাশের বুক ছিঁড়ে কলিজা বের করে চিবিয়ে প্রতিহিংসা দেখিয়েছিলেন সে ছিল ইয়াজিদের দাদী।
পুত্র ইয়াজিদকে খেলাফতের উত্তরাধিকার করেন মোয়াবিয়া (রা.)। তার এ সিদ্ধান্তে প্রতিবাদী হয়ে উঠে মক্কা মদিনা ও কুফার মুসলমানরা। রসুলুল্লাহ (সা.) এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন ইয়াজিদ কে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। তিনি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংঘটিত করার উদ্যোগ নেন। হযরত ইমাম হুসাইন (রা) তার জ্ঞাতি ভাই মুসলিমকে তাদের কাছে পাঠান। তিনি হুসাইন এর কুফা সফরের পরামর্শ দিয়ে চিঠি লেখেন। ইমাম হুসাইন (রা) কুফার দিকে যাত্রা শুরু করেন। কুফার মরুপথ অতিক্রম করার পর কুফার গভর্নর ওবায়াদুল্লাহ কর্তৃক তার জ্ঞাতি ভাই মুসলিম হত্যার সংবাদ পান। তিনি সফরে বিরতি দেননি। কারণ মুসলিমের আত্মীয় স্বজন তাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাপ দিচ্ছিল। বেদুইনরা হুসাইন (রা) এর দল ত্যাগ করল। কারো মতে এই সময় হুসাইন (রা) এর সাথে মাত্র ৪০ টি অশ্ব ও ২০০ সৈন্য ছিল। কিছু দূর অগ্রসর হলে তামিম গোত্রের আরব প্রধানের নেতৃত্বে কুফার অশ্বারোহী বাহিনী হুসাইন (রা) এর পথরোধ করল। অতঃপর তিনি ফোরাত নদীর পশ্চিম তীর বেয়ে চলতে থাকেন। কুফার গভর্নর ওবায়াদুল্লাহ হুসাইন (রা) কে তার শহরের আশেপাশে ঢুকতে দিতে রাজি নন। তিনি ৪০০০০ অশ্বারোহী সহ ওমর বিন সাদকে পাঠান। মহররমের প্রথম দিন হুসাইন (রা) কারবালা প্রান্তরে তাবু গাঢ়েন। এ সময় আবদুল্লাহ হুসাইন (রা) কে শর্তে আত্মসমর্পণের দাবি জানালেন এবং ওমর বিন সাদকে পাঠালেন ফোরাত নদীর তীরে তাকে অবরুদ্ধ করার জন্য। হুসাইন (রা) বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ না করলে ওবায়াদুল্লাহ সীমারকে অবিলম্বে মৃত অথবা জীবিত হুসাইন (রা) কে আনার নির্দেশ দেন। ৯ মহররম শত্রু পক্ষ নদী পথ বন্ধ করে দিল। পানির অভাবে হুসাইন (রা) শিবির হাহাকার শুরু হল। তিনি তার পরিবারকে মক্কায় পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু তারা তাকে ছেড়ে যেতে রাজী হয় নি। আসল দশ মহররম। শুরু হল যুদ্ধ। যুদ্ধে হুসাইন (রা) এর ভ্রাতুস্পুত্র কাসীমসহ একে একে তার পরিবারের সবাই নিহত হন। শত্রুর তীরের আঘাতে পুত্র আসগর পিতার বাহুবন্ধনে শহীদ হল। আঘাত সামলাতে না পেরে হুসাইন (রা) তাঁবুর সামনে বসে পড়লেন। এক মহিলা এক পেয়ালা পানি দিলে তিনি যখন পান করতে যান তখন তার বুকে বর্শা বিদ্ধ হল। তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। তারা তার মস্তক ছেদন করে ওবায়দুল্লাহর পদতলে হাজির করল। কারো মতে, আশুরার ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার অনেক আগে থেকেই।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
- সাত কলেজে ভর্তির আবেদনের সময় বাড়লো
- দিরাইয়ে সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় আটক ২