কুস্তি খেলায় মাঠে মাঠে দর্শকের ঢল

সোহানুর রহমান সোহান
সুনামগঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা কুস্তি। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে জনপ্রিয় এই খেলা। হাওরের ধান কাটার পর প্রতি বছরই প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে আয়োজন করা হয় কুস্তি খেলার। গ্রামে গঞ্জে কুস্তি খেলোয়াড়দের রয়েছে আলাদা কদর ও সম্মান।
কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল এই খেলা। করোনা ও শতাব্দির ভয়াবহ বন্যার পর আবারও প্রাণ ফিরেছে কুস্তি খেলায়। ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীপনা নিয়ে এক গ্রামের সাথে লড়েন অন্য গ্রামের কুস্তি খেলোয়াড়েরা। প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও চলে এই কুস্তি খেলা। রোদ—বৃষ্টি উপেক্ষা করে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসে হাজার হাজার দর্শক উপভোগ করেন ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা। দাওয়াত দিয়ে গ্রামে আনা হয় অন্য গ্রামের কুস্তি খেলোয়াড়দের। তাই এই খেলাটি দাওয়াতি কুস্তি খেলা হিসেবেই পরিচিত।
দর্শক ও কুস্তিগীররা জানালেন, কুস্তি খেলা সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। এটি আবহমানকাল থেকে থেকে নিয়মিত চলে আসছে। দাওয়াতি এই খেলার মাধ্যমে দুটি গ্রাম ও দু’টি অঞ্চলের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনের সৃষ্টি হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খেলা আরও জনপ্রিয় হবে।
কুস্তিগীর লিমন আহমেদ বলেন, কুস্তি সুনামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। এটি অনেক পুরনো খেলা। খেলায় আমরা অনেক আনন্দ পাই। খেলার মাধ্যমে দুটি গ্রামের বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়।
খেলা দেখতে আসা দর্শক আমরিয়া আলম বলেন, কুস্তি খেলার নাম শুনলেই হাজার হাজার দর্শক মাঠে জড়ো হন। রোদ—বৃষ্টিতে ভিজে খেলা উপভোগ করে। আমিও এসেছি রোদের মধ্যে খেলা দেখতে।
আয়োজক সুলতান আহমেদ বলেন, কুস্তি ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় দাওয়াত দিয়ে আনা হয়। আগের দিনই দাওয়াতিরা চলে আসেন। আমরা তাদের আপ্যায়ন করি। তবে এতো জনপ্রিয়তার পরেও আমিনদের (রেফারি) অদক্ষতা ও অনিয়মের অভিযোগে খেলার মাঠে বিশৃঙ্খলার অভিযোগও নেহাত কম নয়। কুস্তিপ্রিয় মানুষদের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এই খেলাকে যেন নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় এবং খেলা পরিচালনাকারি আমিনদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
শিক্ষক ও ক্রীড়াবিদ অনীশ তালুকদার বাপ্পু বলেন, হাজার হাজার মানুষ কুস্তি খেলার জন্য মাঠে অপেক্ষা করে। এই খেলাটি যেন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে শেষ করতে পারেন সেজন্য আমিনদের (রেফারি) প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসলে সুনামগঞ্জের এই খেলাটি বিশ্বের মাঝে সমাদৃত হবে।
এদিকে গ্রামীণ এই খেলাটির ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় আগামী ৩০ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে আন্তঃউপজেলা কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এতে অংশগ্রহণ করবে জেলার ৪ উপজেলার বাছাইকরা কুস্তিগীরেরা। উপজেলাগুলো হলো সুনামগঞ্জ সদর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর ও শান্তিগঞ্জ।
সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুস্তি খেলা সুনামগঞ্জ অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় প্রচুর দর্শক হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছর এই খেলাটি হয়নি। সম্প্রীতি স্থানীয়ভাবে এই খেলাটি শুরু হয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে আগামী ৩০ তারিখে সুনামগঞ্জ জেলা স্টেডিয়ামে এই কুস্তি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।