ক্রমবর্ধমান শিশু ধর্ষণ ঘটনা/আইনি বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সামাজিক প্রতিরোধ জাগ্রত হোক

গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে জেলার শিশু ধর্ষণ বিষয়ে একটি পর্যালোচনামূলক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ৭টি শিশু ধর্ষণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটার তথ্য দেয়া হয়েছে। দিরাই উপজেলার ধল ও আনোয়ারপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাজিতপুর ও লক্ষীপুর, সদর উপজেলার হালুয়ারগাঁও ও হুসেনপুর এবং জামালগঞ্জের ভীমখালিতে এসব ঘটনা ঘটেছে। উদ্বেগের বিষয় হলোÑ ৭টি শিশু ধর্ষণ ঘটনার মধ্যে কেবল একটির ক্ষেত্রে রিপোর্ট পজিটিভ হয়েছে। বাকি ৬ টির ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অন্যগুলোতে ঘটনা হয়তো সত্য, ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেভাবে আলামত না পাওয়ায় আমরা সেটি প্রমাণ করতে পারিনি। এক্ষেত্রে মামলা অবশ্যই চলবে। ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণ হবে আদালতে।’ সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এক্ষেত্রে পুলিশের শূন্য-সহনশীলতার কথা পুনর্ব্যক্ত করে আসামি গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার উল্লেখ করেছেন। ক্রমবর্ধমান শিশু ধর্ষণ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সামাজিক শক্তিও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। নারী নির্যাতন ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ কমিটি নামক একটি সংগঠন শনিবার শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ারে মানববন্ধন করেছে। ওই মানববন্ধনে ধর্ষিতা এক শিশুর বাবা বলেছেন, ‘আমার ৬ বছরের মেয়েরে ৫০ বছরের অমানুষ খারাপ কাজ করেছে। ঘড়ও রক্ত পড়ছে। প্র¯্রাবের সাথে যন্ত্রণা ওর। তারা (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ) কয় কুন্তৌ অইছে না।’ এই অসহায় পিতার আর্তনাদ আকাশে মিলায়, দায়িত্বশীলদের মর্মমূলে পৌঁছে না। একটি ধর্ষণ ঘটনা ধামাচাপা দিতে এবং ডাক্তারি সনদ প্রভাবিত করতে জনৈক রাজনৈতিক নেতার দৌড়ঝাঁপ করার খবর আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জেনেছি। ধর্ষকদের পক্ষে এমন প্রভাবশালী-সমর্থন থাকলে সমাজ থেকে এরকম ভয়ানক ও ঘৃণ্য অনাচার দূর হবে কী করে ?
যেসব শিশু ধর্ষণের শিকার হয় তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এই দরিদ্র পরিবারগুলো বিচার পাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুতের যে জটিল প্রক্রিয়া, সেখানে প্রভাব দেখাতে পারে না। পক্ষান্তরে ধর্ষকরা থাকে কিছুটা প্রভাবপুষ্ট। এই অমানুষদের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলারও লোক থাকে। এর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রমাণের অভাবে দুর্বৃত্তরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। সমাজের এই অধঃপতন অসহায় চোখে আমরা তাকিয়ে দেখছি। প্রতিকার প্রতিরোধের সব প্রয়াস নানা ছলচাতুরির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। অধঃপতিত ও স্খলিত নৈতিকতার এক চরম দুঃসময় অতিক্রম করছি আমরা। সমাজের সর্বস্তরে এমন অধঃপতন। প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে হয়তো ক্ষেত্র বিশেষে এক দুইটি ঘটনার সুবিচার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এতে কি সমাজ কলুষমুক্ত হতে পারবে? আসলে সমাজের ভিতর থেকে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে না উঠলে তথা মনুষত্বের বিবেক জাগ্রত না হলে কোনো সামাজিক অনাচারই দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন সবকিছু সহ্য করে নেয়ার এক অদ্ভুত বাস্তবতা দেখি। অনাচার বাড়াতে এই ধরনের নিষ্ক্রিয়তা আরেক ভয়ানক অনুঘটক বটে।
পাঁচ ছয় বছর বয়সী শিশুর উপর বয়স্ক পাষ-রা যেভাবে হামলে পড়ে তা পশুও করে না। মূলত নৈতিকতার দিক থেকে সমাজের কিছু মানুষ যে পশুদের চাইতেও অধম হয়ে গেছে আলোচ্য শিশু ধর্ষণ ঘটনাগুলো তার প্রমাণ। এরকম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমরা আ্ইনের কঠোর প্রয়োগ কামনা করি। পুলিশ বলছে, যে ভিকটিম থানায় আসতে পারবে না, পুলিশকে সেখানে ভিকটিমের বাড়িতে পৌঁছ যেতে হবে। তাঁদের বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমরা এই ধরনের আশ্বাসবাণীর বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চাই। পাশাপাশি ধর্ষণসহ সব ধরনের সামাজিক অনাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো সামাজিক শক্তির উত্থান কামনা করি।