ঘুচতে যাচ্ছে নবীনগরের দুঃখ, নির্মিত হবে স্থায়ী সড়ক

সোহানুর রহমান সোহান
চীনের দুঃখ বলা হতো হোয়াংহো নদীকে। প্রাচীন চীনে প্রায়ই হুয়াংহো নদী ফুলে উঠে সবকিছু বন্যায় ভাসিয়ে দিত বলে এই নদীর নাম ছিল ‘চিনের দু:খ’। তেমনি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর নবীনগর এলাকার বাসিন্দারা তাদের দুঃখ বলেন নবীনগরের সড়ককে। প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুম এলেই এই সড়ক হয়ে উঠে তাদের দুঃখ দুর্দশার কারণ। বৃষ্টি হলেই বিটুমিন উঠে খানা খন্দে ভরে যায় সড়কটি। কাদা আর পানি এক হয়ে সেখানে চলাচলের মতো আর কোন অবস্থা থাকে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই নদীর পানি এসে ভেঙেচুরে নিয়ে যায় সড়কটি। সড়কের আধা কিলোমিটার অংশেই যতো ভোগান্তি। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করছে সড়কটিতে। যার কারণে নবীনগরের মানুষের পাশাপাশি কষ্ট পোহাতে হতো ধারারগাঁও, খাইমতর, বিরামপুর, আশাউড়া সহ সড়কে চলাচলকারি লক্ষাধিক মানুষের।
নবীনগরের বাসিন্দা সুহেল আহমেদ বললেন, ৮ বছর হয় এই জায়গায় ঘর করেছি। তখন থেকেই সড়কের নাজেহাল অবস্থা। বুধবার সকালের বৃষ্টির পর গর্তে পানি জমে আছে। আরও বৃষ্টি হলে পুকুর হয়ে যাবে।’
সড়কে চলাচলকারি ইজিবাইক চালক হোসেন আলী বললেন, গাড়ি চালিয়ে ৩০০ টাকা রুজি করলে ২০০ টাকাই গাড়ি মেরামত করতে চলে যায়। সড়কের এতোই খারাপ অবস্থা যে প্রত্যেকদিনই গাড়ির কোনো না কোন পার্টস নষ্ট হচ্ছে।
একই সড়কে এখন একটি সুবিশাল বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সড়কের দুরবস্থা। সড়কের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালে আসা রোগীরা।
হাসপাতালটির এজিএম সুজন খন্দকার বললেন, মনোরম পরিবেশ, অত্যাধুনিক চিকিৎসা থাকার পরও শুধুমাত্র সড়কের কারণে রোগীরা হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাতায়াতের কষ্টের কারণে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসতে স্বজনরা উৎসাহী হন। সড়কটি নির্মাণ হলে কি পরিমাণ জনসেবা হবে তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়।
তবে বহু প্রতিক্ষার পর এবার ঘুচতে যাচ্ছে নবীনগরের দুঃখ। বিটুমিনের পরিবর্তে নির্মিত হবে ৭ ইঞ্চি উচ্চতার পাকা আরসিসি সড়ক। সুনামগঞ্জ পৌরসভার অর্থায়নে ১ কোটি নয় লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত হবে সড়কটি। ইতিমধ্যে সড়কের টেন্ডার আহবান করা হয়ে গেছে। আগামী ১৩ মার্চ টেন্ডার উন্মুক্ত করে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ঠিকাদার নিযুক্ত হবে। এপ্রিলে কাজ শুরু করে ১ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে জনগনের দুর্ভোগ লাঘব করা হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বললেন, বারবার বিটুমিনের সড়ক নষ্ট হচ্ছে, এ কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নেই আরসিসি পাকা সড়ক করার। নবীনগরের সড়কের এক অংশ আগেই পাকা করা হলেও আরেক অংশের দুরবস্থা রয়ে গিয়েছিল। যে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে আমার নিজের খারাপ লাগতো। বিশেষ করে আমার পৌরসভার বাইরে উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের চলাচল এই সড়কে থাকায় রাস্তার কাজ নিয়ে আমি বেশি চিন্তিত ছিলাম। ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও বৈশ্বিক সংকট এবং অর্থাভাবে সড়কটি পুননির্মাণ করতে পারিনি। অবশেষে সড়কটি নির্মাণের টেন্ডার দিতে পেরে আমার নিজেরও ভালো লাগছে। সড়কটি নির্মাণ হয়ে গেলে আর মানুষের দুঃখ থাকবে না।