জগন্নাথপুর অফিস|| জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও যন্ত্রের সুফলে দ্রুত ধান কাটতে পেরে কৃষকরা খুশি। বৈশাখ মাস শেষ হতে না হতেই হাওরের ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। যন্ত্র দিয়ে ধান কাটায় এবার কৃষকের সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। অকাল বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ফলে কৃষকরা খুশি। এছাড়াও শতভাগ যন্ত্রের ব্যবহার করে ৬১ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো বোরোধান উত্তোলন করেন কৃষক।
কৃষক ও কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার হাওরে ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। গত ৭ এপ্রিল থেকে ধান কাটা শুরু হয়। হাওরের ১০০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে ৬১ হেক্টর জমিতে শতভাগ যন্ত্রের মাধ্যমে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ ও ধান কর্তন করা হয়।
উপজেলার নলুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক চিলাউড়া গ্রামের গফুর মিয়া জানান, তিনি তিন হাল (১২ কেদারে এক হাল) জমি আবাদ করেন। প্রতি বছর সিরাজগঞ্জ থেকে ২০/২৫ জনের একদল ধান কাটার শ্রমিক এসে ধান কাটত। এবার ৭০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকির সহায়তা নিয়ে একটি কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র কিনে এক সপ্তাহের মধ্যে নিজের ধান কাটা শেষ করে প্রতিবেশীদের জমির ধান কেটে দিতে পারছি।
ভূরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, ঝড়,আগাম বন্যা,শিলাবৃষ্টির জন্য কৃষকরা প্রতি বছর বোরো ফসল নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এবার এসব আতঙ্কে দ্রুত ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটেন। তিনি বলেন, কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটালে কেদার প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হতো। কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রে কেদার প্রতি খরচ হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। এতে প্রচুর সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়। তিনি বলেন, এক সঙ্গে ধানকাটা মাড়াই বস্তাবন্দি হয়ে যাওয়ায় আমাদের উপকার হয়েছে।
কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের এক মালিক এমদাদুর রহমান সুমন জানান, কৃষকদের সুবিধার্থে দিন ও রাতে একটি যন্ত্র দিয়ে কমপক্ষে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেদার জমির ধান কাটা গেছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র আমাদের হাওর এলাকার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। প্রতি বছর শ্রমিক সংকটে ধান কাটতে না পেরে ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও অকাল বন্যায় ফসল হারাতে হতো। এছাড়াও পুরো উপজেলার বোরোধান উত্তোলন করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগতো। এবার কৃষকরা পুরোপুরি এর সুফল পেয়েছে। এক মাসেই ধান কাটা শেষ। তিনি বলেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে তবে ব্রি-২৮ ও ২৯ চাষে কৃষকরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হয়েছে। এতে সময় অর্থ দুটো সাশ্রয় হয়েছে। তিনি বলেন, এ উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন ধান। বাম্পার ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। ধান উঠেছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৬ মেট্রিক্স টন। হারভেস্টারের মাধ্যমে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে।
- ধর্মপাশায় বখাটেদের উৎপাত, ইউএনওর কাছে এলাকাবাসীর আবেদন
- পূর্ব লন্ডনে জগন্নাথপুরের গৃহবধূকে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দেয় স্বামী