আমাদের সমাজ বাস্তবতায় শিক্ষকদের নিরীহ পেশাজীবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সে আদ্যিকাল থেকেই। যদিও আপ্তবাক্য হিসাবে আমরা প্রায়শই শিক্ষকদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করি কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ব্রিটিশ আমলে পরিদর্শনকারী এক বিদেশি পরিদর্শকের কুকুরের ভরণপোষণ খরচের সাথে এক দরিদ্র শিক্ষক নিজের পারিশ্রমিকের তুলনা করে যে আক্ষেপ করেছিলেন সেই বাস্তবতা বহুলাংশে বদলেছে বটে। শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয়করণ হয়েছে, বেড়েছে বেতন—ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি। কিছু শিক্ষক শিক্ষকতাকে মহান ব্রতের বাইরে ব্যবসা হিসাবেও বেশ দাঁড় করিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক শিক্ষকের উচ্চ নৈতিকতাবোধ প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু তদুপরি সামষ্টিকভাবে শিক্ষক সমাজ আজও প্রান্তিক হয়েই নিজেদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন। উপরের কথাগুলোর অবতারণা করা হলো গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদসূত্রে। জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সরকারি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা গত এক বছর যাবৎ বেতন পাচ্ছেন না বলে সংবাদে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। কলেজটি ২০১৮ সনে সরকারিকরণ হলেও শিক্ষক—কর্মচারিদের বেতন—ভাতা এখনও সরকারি কোষাগার থেকে পরিশোধ করার ব্যবস্থা হয়নি। বেসরকারি কলেজের মতো নিজস্ব উৎস থেকে তাঁরা বেতন—ভাতা গ্রহণ করেন। ওই কলেজে কোনো পরিচালনা কমিটি না থাকায় কলেজ অধ্যক্ষের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার যৌথভাবে তহবিল পরিচালনার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এই হিসাবে শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন—ভাতার বিল ও চেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। সংবাদসূত্রে জানা যায়, ৬ মাসের বেতন বিল প্রস্তুত করে কলেজ থেকে স্বাক্ষরের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দাখিল করা হয়। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই বিলে স্বাক্ষর না করায় শিক্ষক কর্মচারিরা বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। শিক্ষক—কর্মচারিরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা বারবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করে বিলে স্বাক্ষর করার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিলে তো স্বাক্ষর করছেনই না বরং তাঁদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সাথে এমন আমলাতান্ত্রিক দাম্ভিকতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জগন্নাথপুর গণমাধ্যমকে বলেছেন, কলেজের আয়—ব্যয় হিসাব তদন্তের জন্য তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে অধ্যক্ষ তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে দুইজনকে মনোনয়ন দিচ্ছেন না। ওই প্রতিবেদনের আলোকে ইউএনও বেতন বিলে স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার যখন কলেজের তহবিল পরিচালনার সাথে যুক্ত রয়েছেন তখন তিনি কলেজের আয়—ব্যয় হিসাব যাচাই বাছাই করতে পারেন। অধ্যক্ষ কেন ওই কমিটিতে নিজের দুই প্রতিনিধি মনোনয়ন না করে তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছেন তার কারণ আমাদের জানা নেই। আমরা মনে করি তদন্ত কমিটিকে সচল রাখতে অধ্যক্ষের অগ্রণী ভূমিকা রাখা উচিৎ। তবে ে¯্রফ এ কারণে সকল শিক্ষক ও কর্মচারির বেতন বিল আটকে রাখাটা একেবারেই অমানবিক, বিধিবহির্ভূত ও ক্ষমতার অপব্যবহার। কলেজের আয়—ব্যয়ে কোনো অনিয়ম থাকলে তা দাপ্তরিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শেষ ও দায় আরোপিত হবে। এজন্য সকল শিক্ষক—কর্মচারির বেতন বন্ধ রাখতে হবে কেন?
শিক্ষক ও কর্মচারিরা কলেজে চাকুরি করছেন মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য। কর্তব্য পালন করার পর এই বেতন পাওয়া তাঁদের অধিকার। এই অধিকারকে বিনা কারণে বন্ধ করে রাখা অথবা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার মতো তৎপরতাকে কেউই সমর্থন করতে পারেন না। মাউশি সিলেট বিভাগীয় অফিসের সহকারী পরিচালকও বেতন পাওয়াকে শিক্ষক কর্মচারীদের অধিকার হিসাবে মন্তব্য করেছেন।
সুতরাং জগন্নাথপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করার জন্য আমরা অনুরোধ জানাই। একই সাথে যে প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জগন্নাথপুর তদন্ত করতে চাইছেন সেই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য কলেজ অধ্যক্ষকে অনুরোধ করছি।
- দোয়ারায় প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলন
- পাকনার হাওরের বিলে ঐতিহ্যবাহী পলোবাইচ