জাতীয় দৈনিক সমকালে বৃহস্পতিবারের প্রধান সংবাদ শিরোনা-‘বিরোধীদের ভোটে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ’ শীর্ষক খবরে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে, প্রধানত বিএনপি; নির্বাচনে আনতে আন্তরিকতা প্রদর্শন ও বেশ কিছু বিষয়ে নমনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিদেশি কূটনীতিকদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং নেতা-কর্মীদের নামে দায়েরি মামলা-মোকদ্দমা পর্যালোচনার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যখন রাজপথ সরব এবং জনগণ আতঙ্কিত; তখন সরকারের এমন ইতিবাচক মনোভাব নিঃসন্দেহে অনেক স্বস্তির। তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এখনও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার অনমনীয় মনোভাব রয়েছে। এই মনোভাব চলমান সমঝোতার পথটিকে কতোটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সে সন্দেহ থেকেই যায়।
আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় এ দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার বিষয়ে আগ্রহী। নানাভাবে তাঁরা এই মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছেন। তবে তাঁরা কখনও নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তাঁরা স্পষ্ট করেছেন যে, নির্বাচনি প্রক্রিয়াটি সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুসারে সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে সংবিধান মোতাবেক এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন করার কোনো উপায় নেই। যদি এরকম ব্যবস্থার পুনঃ প্রবর্তন করতে হয় তাহলে সংবিধানের সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক বা অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা চায় না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান অনঢ় থাকলে সামনের দিনগুলো ঝঞ্ঝাসঙ্কুল হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। যা শান্তিপ্রিয় সাধারণ নাগরিকবৃন্দের নিকট একেবারেই অনভিপ্রেত। গত এক দশকের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে দেশের নানা দিকে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। বেড়েছে বিদেশি বিনিয়োগ। কর্মসংস্থান থাকায় বেকারত্বের অসহনীয় চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। উৎপাদন আশাব্যঞ্জক। এসবই বাধাগ্রস্ত হবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে। বিরোধী দল এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন কর্মসূচী পালন করছে এবং ভবিষ্যতেও তারা কোনো অশান্তি না করেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও জনচাপ বাড়িয়ে দাবি আদায় করার কথা জানিয়েছে। তবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তাই কখন বিরোধীদের দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অশান্তির দাবানল জ্বলে উঠে সেটাই আশঙ্কা। এরকম হলে দেশ যেটুকু এগিয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন হবে। এই বিষয়টি সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষসমূহকে দায়িত্বশীলতার সাথে অনুধাবন করতে হবে।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আস্থার সংকট প্রবল। এই আস্থার সংকট দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারি দলকে। কারণ নির্বাচনের সময় তারাই দায়িত্বে থাকবেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি যাতে কোনো ধরনের প্রভাবদুষ্ট না হয়ে সত্যিকার অর্থেই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে সেজন্য বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করা গেলে আমাদের ধারণা শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলও সেই নির্বাচনে অংশ নিবে। কারণ নির্বাচন ছাড়া রাজনৈতিক দলের আদর্শ বাস্তবায়নের আর কোনো উপায় নেই। দেশের সাধারণ মানুষ সর্বাবস্থায় দেশে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রয়েছে দেখতে চায়। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায় রাজনৈতিক দলের। এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে জনগণ বিরূপ হবে আর এর ফাঁক গলে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ফায়দা তোলার তালে থাকতে পারে যেমনটি আমরা এক এগারোর সময় দেখেছিলাম। তাই পরিস্থিতি ওই ভয়ানক ভবিষ্যতে যাওয়ার আগেই সকল পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছান, এই আমাদের নিবেদন।
- ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফেরত চেয়ে শামীমার করা আপিল খারিজ
- বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ আতম সালেহ্ আর নেই