মতিউর রহমান
বিকাল পাঁচটা হবে। ঢাকা মেডিকেলের কেবিন বেডে শুয়ে শুয়ে কত কথা ভাবছি। হঠাৎ সুনামগঞ্জ থেকে বন্ধুবর সুখেন্দু সেনের টেলিফোন পেলাম। নানা আলাপচারিতার পর সুখেন্দু বললো ‘সুনামগঞ্জের খবর’ নাকি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা বের করবে। কথাটা শুনে মনটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠলো। সুনামগঞ্জের খবরের জন্মকাল থেকেই প্রতিটা সংখ্যায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে। আর এ সংখ্যায় আমি লিখতে পারবো না অসুস্থতার কারণে। তাই মনে হল রোগ শোক আমাকে ধরেছে ভালো করেই। আমিও লড়াই করে যাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে। যদিও অবেলায় এ যুদ্ধ। কারণ বয়স হলে প্রকৃতি তথা সৃষ্টিকর্তার নিয়ম অনুযায়ী এ যুদ্ধে সবাই হারে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের শেষে শেষ যুদ্ধে পৃথিবীতে কেউ জিতেছে বলে আমি শুনিনি। আমিও হারবো, পৃথিবী থেকে বিদায় নেব। একাত্তরের রাইফেলের গুলি সম ট্যাবলেট প্রতিদিন কত শত যে গিলছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। দেখা যাক, কি হয়-শুধু আমার নয় সবারই আগামী দিনকাল সবকিছুই নিজেরা যতোই চেষ্টা করি হবে না। কারণ সৃষ্টিকর্তার লিখনে নির্দিষ্ট হয়ে রয়েছে সবার ভাগ্য। যাক সেসব কথা। সুনামগঞ্জের খবরের কথায় আসি। এক ঝাঁক তরুণ উদ্যমী তরুণ নিয়ে দৈনিক আকারে প্রকাশ করছে ছোট ভাই পঙ্কজ ‘সুনামগঞ্জের খবর’ পত্রিকাটি। তার ছিল সুনামগঞ্জের মতো মফস্বল শহর থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের অদম্য স্বপ্ন আর সাহস। সুনামগঞ্জের অনেক প্রথিতযশা বহু সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, বহু চেষ্টা করেছেন, বহু উদ্যোগ নিয়েছেন সুনামগঞ্জ থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের। কিন্তু নানা প্রতিকূলতা আর নানা বাধার কারণে সফল হতে পারেননি। তাদের ব্যার্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পঙ্কজ এগিয়েছিল সুনামগঞ্জ থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের। সে সফল হয়েছে। সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সমূহের মধ্যে সুনামগঞ্জের খবরের নিজস্ব স্বাতন্ত্রবোধ রয়েছে। ঠিক তেমনি রয়েছে তার সম্পাদকের। কয়েক বছর যাবত তার পত্রিকায় লিখছি, অথচ মাস দুয়েক আগে তার সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। তবে একসময় সেই ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটে।
‘সুনামগঞ্জের খবর’ প্রতিষ্ঠা পাক, সুন্দরভাবে চলুক, বর্তমানে যে ধারায় কোনো বলয়ের আবর্তে ঢুকে স্বকীয়তা যেনো হারায় না এই কামনা করছি। যদিও ‘সুনামগঞ্জের খবর’ এর অফিস কোনো ভবনের একতলা দু তলায় কাজ পরিচালনা করছে, তখন মাঝে মাঝে তার অফিসে যেতাম। ভাব বিনিময় করতাম। কিন্তু এখন চলে গেছে সুরম্য ভবনের তিন তলায়। যেখানে আমার মতো বয়স্করা অনেকেই উঠতে পারেন না। ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমি পারি না। তাই এই ভবনের নিচ দিয়ে আমি যখন যাই তখন বুক ভরা শুভ কামনা থাকে ‘সুনামগঞ্জের খবরের প্রতি’।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক।
- গান্ধী-মৌলানা আবুল কালাম আজাদ-জিন্না
- ‘দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর’ মানুষের কথা বলে