২০১৬ সনের ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সম্মেলনের ৭ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি দলের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গত ক’দিন ধরে নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস ও আগ্রহের জোয়ার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বারবার এই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা এবং স্থগিত হওয়ার মধ্য দিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিলো তার অবসান ঘটল আজ। যেকোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলন হলো সেই দলের গতিশীলতা আনয়নের উপলক্ষও বটে। তাই জেলা কমিটির আওতাধীন সকল ইউনিট কমিটি ও জেলার সকল স্তরের নেতা-কর্মীরা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে সম্মেলনের জন্য অপেক্ষা করেন। গণতান্ত্রিক চর্চাকে সমৃদ্ধ করতে এ ধরনের সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোতে সেই অর্থে সকল পর্যায়ের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচনের সংস্কৃতি তিরোহিত হলেও সম্মেলনে তৃণমূলের স্পন্দন অনুভব করা যায়। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সেই স্পন্দন নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সেজন্য জেলা আওয়ামী লীগের আজকের সম্মেলনটি অনেক বেশি অংশগ্রহণমূলক হবে আশা করা যায়। আমরা এই বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জেলা সম্মেলনের সফলতা কামনা করি।
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পথপরিক্রমায় এই জেলায় (সাবেক মহকুমা) দলটিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অনেক ত্যাগী ও মহান রাজনীতিবিদ। পাকিস্তানি আমলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিতে এইসব নেতার রয়েছে অনন্যসাধারণ ভূমিকা। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং জাতিগঠন কর্মকা-সহ ১৯৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ে বহু নেতা নিজের ব্যক্তিত্ব ও প্রজ্ঞা দিয়ে দলটিকে এগিয়ে নিয়েছেন, বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজকের সম্মেলনে অবশ্যই সেইসব মহান নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে। মরহুম আকমল আলী মোক্তার, দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী, অক্ষয় কুমার দাস, হুসেন বখত, আব্দুর রইছ, আব্দুজ জহুর, আলফাত উদ্দিন আহমদ, আয়ুব বখত্ জগলুল; এই নামগুলো সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের গৌরবের পালক। এই গৌরবের উত্তরাধিকরত্বই বহন করছেন বর্তমান নেতৃবৃন্দ। অতীতের যোগসূত্র কখনও ছিন্ন হওয়ার নয়। এ হলো ক্রমবর্ধমান এক অনন্তধারা। যে ধারায় দিনে দিনে যুক্ত হন অনেকে। এই দীর্ঘ সুতোর প্রতি বিন্দুতে ইতিহাসের যে সত্য লুকিয়ে আছে তাকে স্বীকার করে নেয়ার নামই হলো সমৃদ্ধ বর্তমান। আমরা আজ এইসব নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
দীর্ঘ ৭ বছর সম্মেলন করতে না পারা যেকোনো সংগঠনের স্থবিরতাকে নির্দেশ করে। আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায়। একটানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে দলটি। তাই এই দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেশি। তা দেশোন্নয়ন বলি, জাতি গঠন বলি, উচ্চ নৈতিকতা বলি বা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ; সবক্ষেত্রেই তাদের দায়িত্বই সর্বাধিক। সংগঠন গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে নিয়মিত সম্মেলন করতে পারলে শক্তিশালী হয় দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আজ যে সম্মেলন হচ্ছে সেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক চর্চার এক অনুপম দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আজ যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে সেগুলোতে দলের নেতা-কর্মীদের মনোভাবের সঠিক ও অর্থবহ প্রতিফলন থাকলে তৈরি হবে সেই দৃষ্টান্ত। শুধু আওয়ামী লীগ নয় বরং জেলার সকল রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ এই সম্মেলনকে অনুসরণ করছেন ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে। দলটি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারাকে এগিয়ে নিলে সকলের জন্য অনুসরণীয় পথরেখা তৈরি হতে পারে।
সম্মেলন উপলক্ষে আজ এখানে সমবেত হয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দের অনেকে। তাঁদের সকলকে আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন। প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জ আজ এই সম্মেলনের কারণে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠেছে। প্রাণের এই আবেগকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে সম্মেলনটি সব অর্থে সফল হয়ে উঠুক, আমাদের কামনা তাই।
- ওবায়দুল কাদের বেলা ১১ টায় শান্তি সমাবেশে বক্তব্য দেবেন
- রাজনীতিবিদদের আস্থার সংকট ও অর্থনীতির উল্টোযাত্রা