বিশ্বজিত রায়, জামালগঞ্জ
মৃদু বাতাসে দোলকাচ্ছে ধানমঞ্জরি। কোথাও মাথা নুয়ে পড়েছে ধানের শীষ। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ার ফলনপোক্ত রেশ জমিনে। গাঢ় সবুজের হাওর যেন সোনালী বর্ণ ধারণের ক্ষণ গুণছে। কৃষকের মনে সেই স্বপ্ন দোলা দিয়ে গেলেও হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে স্বস্তিতে নেই জামালগঞ্জের হালি হাওর পারের কৃষক। তাদের ফলনভাগ্য দুর্ভাগ্যের অরক্ষিত স্থানে পতিত করছে পিআইসি ও দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালিপনা, এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছে।
‘বিশাল হাওর এলাকায় বাঁধকে টেকসই করতে সময় লাগে। ডেটলাইন দিয়ে বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা একটা ডেটলাইন দিয়ে রাখি। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে সেটা সব সময় রক্ষা করা সম্ভব হয় না।’ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বক্তব্য এটি। গত ১৫ মার্চ দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে নিয়োজিত পিআইসির লোকজনসহ দায়িত্বশীলরা হয়তো সে কথায় গা ভাসিয়ে চলছেন। হালি হাওরের ঘনিয়ার বিল সংলগ্ন বাঁধে তারই প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিলম্বিত সময়ের প্রায় এক মাস পরে এসেও ঢিমেতালে চলছে হালি হাওরের ৩৫ নম্বর পিআইসির কাজ। গত মৌসুমে বৌলাই নদীর টার্নিং পয়েন্টের এ বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু অধিক মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ নিয়ে কৃষক ও হাওর সচেতন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ, হতাশা ও অস্বস্তি কাজ করছে।
শুক্রবার সকালে ঘনিয়ার বিল সংলগ্ন বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, নদীগর্ভে ধসে পড়া পুরাতন বাঁধের খানিক দূরে হাওর অভ্যন্তরে রোপণ করা ধানি জমির উপর দিয়ে মাটি ফেলা হয়েছে। পিআইসির অনুপস্থিতিতে বাঁধে যে যার মতো করে কাজ করছে শ্রমিকেরা। গরজহীনভাবে কেউ মাটি পেটাচ্ছে, কেউ স্লোবে নেমে কোদালের আচড় দিচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ৩৬ নম্বর পিআইসির বাঁধ কিনারে চাপা দেওয়া দূর্বাঘাসে সজীবতার রেশ ফোটে উঠলেও ঘনিয়ার বিলসংলগ্ন বিপজ্জনক এ বাঁধটিতে এখনও কাজের নামে খেয়ালিপনা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা দু’একদিনের মধ্যেই কাজ শেষ হওয়ার অভয় দিচ্ছেন।
গত বছর ডেঞ্জার জোন হিসেবে বিবেচিত বৌলাই নদীর এই টার্নিং পয়েন্ট দিয়েই মহাবিপদ তেড়ে আসার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। পরে পিআইসি ও দায়িত্বশীলদের দিনরাত খাটুনিতে সেবার রক্ষা পেয়েছিল বাঁধটি। এ বছর এমনিতেই কালবৈশাখীর আগাম তা-বে কৃষকের শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে। এর মাঝে যদি টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কবলে পড়ে হাওর তাহলে কোনরকম মাটি ফেলা বাঁধটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। এমন পরিস্থিতিতে দূর্বা-দুরমুশের কাজ সহ কবে বাঁধে বাঁশ-বস্তা ফেলা হবে সে প্রশ্ন উঠছে। এপ্রিলের প্রথমদিকে এসে বাঁধের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় গোটা হাওরই ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।
জমির মালিক সেলিম আহমদ বলেন, আমার জমির উপর দিয়াই বাঁধ হইছে। বাঁধ হইছে তো হইছেই। এখন বড় কথা হইতাছে পুরানো বাঁধের উপর মাটি না পড়লে সমস্যা হইয়া দাঁড়াইব। কারণ যে বাঁধ বান্ধা হইছে এইডা তো নতুন মাটি। পানি আইলেই ভাঙ্গা শুরু হইব। পুরান বাঁধে আরও দুই ফুট উচ্চতায় মাটি ফেলাইলে নতুন বাঁধটা শক্তিশালী হইব। না হইলে ঝুঁকি আছে।
বাঁধ থেকে ফিরে হালি হাওরপাড়ের কৃষক ও গণমাধ্যমকর্মী মো. বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ বলেন, ঘনিয়ার কাড়ার এই বাঁধটা হালি হাওরের জন্য বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মাঝে এখনও যদি বাঁধের কাজ চলতে থাকে তাহলে কৃষকের নিরাপত্তা কোথায়। ওই একটি বাঁধ ভাঙলেই পুরো হালি হাওর তলিয়ে যাবে। তখন এর দায়ভার কে নেবে? জরুরী ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণে কর্তৃপক্ষের জোড়ালো ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
পিআইসি সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এই বাঁধটা প্রথমে আছিল নদীর পারে পারে। পরে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ইউএনও স্যার হুট কইরা ঘুরাইয়া দিছেন ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে। যে কারণে পিছাইছে। এর মাঝে বৃষ্টি-বাদলও আছিল। এখন মাটির কাজ শেষ। বাকি কাজ আইজ-কালকের মধ্যে শেষ হইব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুধু বস্তা ধরা আছে কিছু। বাঁশ নাই।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন, নদী ভাঙ্গনের ফলে বাঁধের কাজটা রিভাইস করা হয়েছে। রিভাইস করার কারণে বিলম্বে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে। যে কারণে দেরি হয়েছে। এখন কাজটা প্রায় শেষের দিকে। এখানে বস্তার কাজ নাই। রিভার সাইডে ঘাস লাগানো হবে। পেছনের দিকে লেভেলিং ড্রেসিং করে ঘাস লাগবে। এছাড়া ধানি জমির যে ব্যাপারটা এটা আমরা ম্যানেজ করেছি। কৃষকের কোন আপত্তি নেই।
শিরোনাম:
- ‘ডাইনামিক ইংলিশ গ্রামার এন্ড কম্পোজিশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- বিশ্বম্ভরপুরে চান্দিনা ভিটের লাইসেন্স বিতরণ
- বিশ্বম্ভরপুরে জাতির পিতার ‘জুলিও কুরি’ পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন
- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আন্ত:ক্লাব বির্তক প্রতিযোগিতা
- বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তিতে জামালগঞ্জে সভা