টাঙ্গুয়ায় পর্যটন শিল্প বিকাশে মতবিনিময়/ জীববৈচিত্র রক্ষার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার
দর্শণার্থীদের অপরিকল্পিত ও আকাস্মিক ভ্রমণের কারণে দেশের অন্যতম পর্যটক জোন টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হাওরের সম্পদ, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সর্বোপরি পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধান নিয়ে অধিকতর ভাবনা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ পর্যটন জোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল শ্রেণি পেশার মানুষজন এমন মত দিয়েছেন। শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এই মতামত দেন সংশ্লিষ্টরা।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা অপকিল্পিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ করা ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে উৎসাহিতকরণ ও পর্যটনের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে বিঘিœত না হয় তার নিশ্চয়তা বিধানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের উপর গুরুত্ব দেন।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাঙ্খিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার পর্যটন নীতিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ হচ্ছে। খসড়া নীতিমালার মধ্যে রয়েছে- পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং তাদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা। রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র সংরক্ষণের মাধ্যমে এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য বিশ^বাসীর নিকট তুলে ধরা। পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা ও এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন সৃষ্টি করা। যথাযথ কর্তৃপক্ষ নৌ-চলাচলের অনুমতি ব্যতীত কোন পর্যটকবাহী জলযানকে হাওরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। টাঙ্গুয়ার হাওরে ট্যাকেরঘাট এলাকা ব্যতীত অন্য এলাকায় নৌ-যানে রাত্রীযাপন না করা। বিদেশী পর্যটকদের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ এবং পর্যটকদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন।
হাওরের জীববৈচিত্র সংকটাপন্ন হতে পারে কিংবা জীববৈচিত্র হুমকির সৃষ্টি হতে পারে এমন কোন কর্মকা- বা আচার আচরণ থেকে পর্যটকদের বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
হাওরের অভ্যন্তরে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর বহন থেকে বিরত থাকা, রাত ১০ টার পর জলযানে ব্যবহৃত জেনারেটর বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ট্যুর অপারেটর নৌ-যান মালিক ও পরিচালকদের।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এহ্সান শাহ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মহি উদ্দিন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা, সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন, তাহিরপুর থানার ওসি ইফতেকার হোসেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটকবাহী হাউসবুট চন্দ্রাবতির পরিচালক ইখতিয়ার উদ্দিন, স্থানীয় পর্যটকবাহী নৌ- সমিতির সভাপতি শাহীনুর মিয়া, অভিযাত্রী এর পরিচালক মাসুক মিয়া, আরডি ক্রুজ এর পরিচালক রবিউল ইসলাম রণি প্রমুখ।
সভায় হাউসবোট ও নৌ-যান মালিক পরিচালকরা তাহিরপুরের বালিজুরি থেকে সীমান্তের জাদুকাটা নদীতে ট্রাফিক সিস্টেম চালু করা, সুনামগঞ্জ, তাহিরপুরসহ প্রয়োজনীয় স্থানে পর্যটকবাহী নৌ-ঘাট ও পাবলিক টয়লেট স্থাপনের দাবি জানান।
প্রায় তিনঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত সভার সকলের মতামতকে জেলা প্রশাসনের করা পর্যটন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।