ডেটলাইন দিয়ে বাঁধের কাজ করা সম্ভব নয়-পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী

৪-৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে বাঁধের কাজ
দিরাই প্রতিনিধি ও জগন্নাথপুর অফিস
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, বিশাল হাওর এলাকায় বাঁধকে টেকসই করতে সময় লাগে। ডেটলাইন দিয়ে বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা একটা ডেটলাইন দিয়ে রাখি। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে সেটা সব সময় রক্ষা করা সম্ভব হয় না। অতীতে সব জায়গায় পানি নেমে যাওয়ার পরে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এবার যেখানে পানি আগে শুকিয়েছে সেখানে পিআইসি আগে গঠন হয়েছে। যেখানে পরে শুকিয়েছে সেখানে পিআইসি পরে গঠন হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করার জন্য আগে থেকেই তৈরি থাকি। কিন্তু এলাকা তো কাজের উপযোগী হতে হবে, এরপর কাজ হবে। সাংবাদিকরা কিছু সত্য ও কিছু বাড়িয়ে বলেন। এসময় তিনি ৯৫ ভাগ বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান।
বুধবার সকালে দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালি বাঁধ পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বেশিরভাগ খাদ্য উৎপাদন হয় সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। এজন্য সরকার গুরুত্বের সাথে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করছে। আমরা টেকসই বাঁধ দিতে চাই। এখানে তড়িঘড়ি করে কাজ করতে গেলে টেকসই নাও হতে পারে। তাই সময় নিয়ে আমরা কাজগুলো করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী খননের মাধ্যমে হাওরের সমস্যার টেকসই সমাধান করা হবে। সেই লক্ষ্যে সরকার দ্রুত কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, কালনীসহ ১৯টি নদী খনন করতে পারলেই স্থায়ী সমাধান আসবে। ভবিষ্যতে পিআইসি নিয়ে আমাদের লাফালাফি করতে হবে না। এই নদীগুলো নিয়ে আমরা একটা সমীক্ষা চালিয়েছি, সেটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সেটা আগামী মাসের ১০ তারিখ পেলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। হাওরের পাশে কতগুলো ভিলেজ প্লাটফর্ম থাকবে- কৃষকরা সেখানে ধান উঠাবে এবং ধান শুকানোর ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে যাচ্ছে, সেখান থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায় নাই। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখনো প্রকল্প পাশ হচ্ছে। আমরা কাজ করছি, বাংলাদেশের উন্নয়ন চলমান আছে।
এরপর প্রতিমন্ত্রী বরাম হাওড়ের বোয়ালিয়া বাঁধ এবং চাপতির হাওড়ের বৈশাখী বাঁধ পরিদর্শন করেন।
বিকাল ৩টার দিকে জগন্নাথপুরের নলুয়া হাওরের চার নম্বর প্রকল্পের কাজ পরির্দশন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এসময় তিনি বলেন, হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিছু প্রকল্পে ত্রুটি আছে। তবে ৪, ৫ দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মন্ত্রী বলেছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার হাওরের বেড়িবাঁধের কাজ ভালো হয়েছে। এসময় হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির লোকজন প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নলুয়ার হাওরের ভূরাখালি থেকে হান্দুয়াবিল পর্যন্ত এক কিলোমিটার নদী খনন করা হলে প্রতি বছর ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে না। এতে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে এবং পাশাপাশি অকাল বন্যার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে ফসল। এসময় প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নদী খনন করার আশ্বাস দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মল্লিক সাঈদ মাহবুব, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার, সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার, সিলেটের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার গোস্বামী, সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা, দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, উপজেলা মাঠ প্রকৌশলী এটি এম মোনায়েম, চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।