তলিয়ে যাচ্ছে উঁচু এলাকার এক হাজার হেক্টর জমির ধান

বিশেষ প্রতিনিধি
করচার হাওরের উঁচু এলাকার ২৬ গ্রামের কৃষকের পাকা ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার বিকালে গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়ক ভেঙে পানি ঢুকে ফসল তলানো শুরু হয়। এসময় রাবারড্যামর পাশের ছয়টি বাড়িও ঢলে ভেসে গেছে। এই বিষয়ে করণিয় নির্ধারণের জন্য সন্ধ্যায় বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জরুরি সভা আহ্বান করেছেন।
সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের কৃষকের প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি রয়েছে করচার হাওরে। হাওরের প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে আরও এক সপ্তাহ আগেই। কিন্তু উঁচু এলাকার জমির ধান এখনো রয়েই গেছে। এসব জমিতে বিআর ২৯ জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। এসব জমির ধান দুই-তিন দিন হয় কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বাড়ায় এই হাওর রক্ষায় ইতিপূর্বে নির্মিত দুটি বৃহৎ রাবারড্যামের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে হাওরে প্রবেশ করছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়ক উপচে এবং দুটি অংশ ভেঙেও পানি ঢুকছে। এই অবস্থায় করচার হাওরের উঁচু এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন।
ভাদেরটেক গ্রামের কৃষক আলামিন বললেন, করচার হাওরের উঁচু এলাকার আমল্য দাগ, ৫২ ও ৫৪ দাগ, হিঙ্গের দাইড় ও দশের দাগের বেশির ভাগ পাকা ধান এখনো জমিতে রয়েছে। হাওরের পাশের ঘাগটিয়া খাল ও গজারিয়া খালের উপর হওয়া রাবারড্যামের উপর দিয়ে পানি আসছে। এই অবস্থায় হাওরে পাকা ধান কেটে আনতে মেশিন নামানো যাচ্ছে না। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না।
একই গ্রামের বাদল মিয়া বললেন, করচার হাওরের উঁচু এলাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। একর প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ মণ ধানের উৎপাদন হবে। আরও এক সপ্তাহ সময় পেলেই এই ধান কেটে ঘরে আনতে পারবেন কৃষকরা। এই সাত দিন রক্তি নদীর পাড়ের বাঁধ এবং দুটি রাবারড্যাম স্থানীয় প্রশাসনকে দেখভাল করে রাখার দাবি জানান তারা। দুটি রাবারড্যাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুলিয়ে রাখার দাবিও জানালেন এই কৃষক।
এই গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বললেন, গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়ক উপচে পানি ঢুকছে। দুটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই পানি ঠেকানো গেলে এবং পাশের ধোপাজানে কর্মরত বালু-পাথর শ্রমিকরা এই হাওরে এসে ধান কাটার কাজ করলে বিপদ মুক্ত হতো তাদের।
সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য গজারিয়া রাবারড্যাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহপরান বললেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও চলতি নদীতে পানি বেড়েছে। রাবারড্যামের উপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। এই অবস্থায় দ্রুত ধান কাটতে হবে।
গজারিয়া রাবারড্যাম পরিচালনা কমিটির সম্পাদক মোবারক আলী শুক্রবার বিকালে জানিয়েছেন, ভাদেরটেক’এর বাজারের পাশের সড়কের দুটি অংশ ভেঙে বিকালে করচার হাওরে পানি ঢুকা শুরু হয়েছে। তারা সেই ভাঙন ঠেকাতে পারছেন না। যেভাবে পানি ঢুকছে উঁচু এলাকার ধানও দ্রুতই ডুবে যাবে।
বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি-উর-রহিম জাদিদ বললেন, দুটি রাবারড্যম পরিচালনা কমিটিকেই সব সময় ড্যাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় ফুলিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গজারিয়া রাবারড্যামের পাশের সড়ক ভেঙে পানি ঢুকা শুরু হয়েছে। কিছু বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাবারড্যাম খুলে দেবার দাবি করা হচ্ছে। রাবারড্যাম খুললে ধানের ক্ষতি হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী করণিয় নির্ধারণ হবে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, এক একর জমির ধানও যাতে কারো অবহেলায় পানির নীচে না যায় সেটি খেওয়াল রাখার জন্য বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।