আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর
‘কোন কালই কাল নয় ২০২২ এর কালই বড় কাল’। তাহিরপুর উপজেলা সদরের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ শাহ আলম। তিনি এবারের বন্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বললেন,‘৭৪, ৮৮, ৯৮, ২০০৪ সকল কালের বন্যা পেরিয়ে বড় কালের বন্যা হলো ২০২২ এর।’
তাহিরপুরে ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছিল টানা বৃষ্টি। পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক ছিল । অন্যদিকে উপজেলার সবক’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেঝে পানি ওঠায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। ১৭ জুন মধ্য রাতে সবাই দেখেন ঘরের চৌকির উপর পানি। রাত পোহালেই তারা দেখতে পান সবার গলা পর্যন্ত পানি। এ অবস্থায় বানবাসি মানুষ কাপড় চোপর ঘুচাবেন না বিছানাপত্র ঘুছাবেন নাকি গরু বাছর ঘুছাবেন, নাকি বারালের ধান সামলাবেন এ নিয়ে দিশে হারা। রাত পোহালে চোখের সামনেই ভেসে গেছে তাদের সারা বছরের কষ্টে উপার্জিত ধান, গরু ছাগল, হাঁস মুরগী।
১৫ জুন থেকে টানা ৫ দিন বিদ্যুৎ না থাকায় কারো সাথে মোবাইল কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাচ্ছিল না। পানির উপর দাঁড়িয়ে বানবাসি মানুষ জেনারেটরের সাহায্যে মোবাইল চার্জ করতে হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী নদী যাদুকাটা, মাহারাম, রক্তি পাটলাই নদী দিয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে ঢলের পানি নেমে আসায় তাহিরপুরের নি¤œাঞ্চলের ২০০টিরও বেশী গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ।
অন্যদিকে বড়ছরা শুল্ক স্টেশনে পাহাড়ি ছড়া দিয়ে ঢলের পানি নেমে এসে শতাধিক কয়লার ডিপো প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার কয়লা পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে।
অপরদিকে নদী ও হাওরের পানি একাকার হয়ে নদী তীরবর্তী ও হাওরপারের গ্রামগুলো ও রাস্তাঘাট ঝড়ো হাওয়ায় বিশাল ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া দৈনন্দিন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ ও মৎস্য আহরনকারী জেলেরা বিশাল ঢেউ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মাছ ধরতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হলো- উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন, বড়দল দক্ষিণ, তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন, বালিজুরি ইউনিয়ন ও বাদাঘাট ইউনিয়ন।
এছাড়া উত্তর বড়দল বাদাঘাট, বালিজুড়ি, উত্তর শ্রীপুর ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রোপা আমন ধানের শতশত একর জমির বীজতলা ও শাকসব্জির ক্ষেত ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকগণ জানিয়েছেন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জি বলেন, তার বারাল (ধানের গোদাম) বন্যার ঢেউয়ের কবলে পড়ে প্রায় ৩শ(তিনশত) মণ ধান পানিতে ভেসে গেছে।
আনোয়ারপুর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিলন তালুকদার বলেন,ঢলের পানিতে আনোয়ারপুর বাজারটি ভেঙ্গে গেছে।
সোমবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বানবাসীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবির বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাহিরপুর উপজেলায় অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে। ৫দিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সাথে নিয়ে তিনি শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
- জগন্নাথপুরে বন্যায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি, আশ্রয় কেন্দ্রেও ঠাঁই মিলছে না
- জগন্নাথপুরে বন্যায় দুর্ভোগে লাখো মানুষ