তুচ্ছ কারণে, বলা যেতে পারে কোনো কারণ ছাড়াই তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের সাত কোটি টাকার দরপত্র বাতিল হওয়ার মতো হতাশাজনক সংবাদ পাওয়া গেলো। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের পুরনো টিনশেড ভবনের জায়গায় নতুন ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিলো ২০২১ সনের ২ মার্চ। সে বছরের ২ অক্টোবর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তখন কিছু কাজও হয়। এরপরই বাঁধে বিপত্তি। সংসদ সদস্য নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় ৫৫টি গাছ কাটা পড়ার বিষয়টিকে সামনে এনে ওই ভবনের জায়গা অন্যত্র নির্ধারণ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ভবন নির্মাণের কাজ। সেই যে বন্ধ হলো আর শুরু হলো না। সংসদ সদস্য পরিষদ সংলগ্ন শনির হাওরে নতুন ভবন নির্মাণের কথা বলেন। উদ্বোধনের পর একটি বড় স্থাপনার কাজ হঠাৎ বন্ধের পিছনে অনেকেই স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বের গন্ধ পাচ্ছেন। বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়ার নয়। ৫৫টি গাছ কাটার বিষয়টি উপলক্ষ মাত্র। উন্নয়ন কাজের প্রয়োজনে গাছ কাটা নিষিদ্ধ নয়। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে গাছ কাটার বাস্তবতা রয়েছে। যেমনÑ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সম্প্রসারণ করতে বহু গাছ কাটা পড়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য গাছ কাটার সরকারি অনুমতিও দেয়া হয়েছে। সরকারি অনুমতি দেয়ার পর সংসদ সদস্য কেন এই বিষয়টিকেই সামনে আনলেন তার মূল কারণ রহস্যজনক নয় বরং তাঁর সাথে চেয়ারম্যানের মতানৈক্যের ধারণাটিকেই দৃঢ় করে। কোনো একটি উপজেলার উন্নয়ন কাজে এমন অযাচিত হস্তক্ষেপ কাম্য হতে পারে না।
সংসদ সদস্যদের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব আমাদের দেশে নতুন নয়। উন্নয়ন কাজের কর্তৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুরূপ দ্বন্দ্বের খবর এখন বেশ পুরনো। এলাকার সকল কাজের একচ্ছত্র ও নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ চেয়ে থাকেন কিছু সংসদ সদস্য। তাঁরা ভুলে যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরাও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং জনগণের নিকট তাঁদেরও প্রতিশ্রুতি থাকে। উন্নয়ন কাজে এমন অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মূল ধারণারও পরিপন্থী। শুধু সংসদ সদস্য নয়, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথেও এই দ্বন্দ্ব প্রকট। উপজেলা চেয়ারম্যানরা এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিরসনে আদালতের শরণাপন্নও হয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা সেই অধিকার ফিরে পাননি। এতে স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম যেমন বাধাগ্রস্ত হয় তেমনি উপজেলা পরিষদের ভূমিকাও দুর্বল হতে থাকে।
কোনো কাজের দরপত্র বাতিল হয়ে গেলে সেই কাজটি পুনরায় শুরু করা অনেক কঠিন। আমরা জানি না তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন নির্মাণে তৈরি হওয়া এই জটিলতার আদৌ অবসান ঘটবে কিনা আর ঘটলেও তাতে কত সময় লাগবে। কিন্তু এটা সত্য, একটি বড় উন্নয়ন কাজ থেকে তাহিরপুর উপজেলাবাসী আপাতত বঞ্চিত হলেন। নিজেদের বৈরী সম্পর্কের কারণে একটি জনপদের মানুষকে উন্নয়ন বঞ্চিত রাখা একেবারেই অনুচিত। আমরা চাইব, তাহিরপুরের উপজেলা পরিষদ ভবন নিয়ে এই দ্বন্দ্বের দ্রুত অবসান ঘটুক। কাজ বন্ধ করার মধ্য দিয়ে স্থানীয় জনগণের নিকট যে ভুল বার্তা পৌঁছালো তাতে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। অথচ যারা এই কাজটি করলেন তাঁরা এই সরকারেরই অংশ। সম্পদশালী তাহিরপুর উপজেলাটি এমনিতেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে উপজেলা সদর ও উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর একেবারেই অনুন্নত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পারস্পরিক আস্থা ও আন্তরিকতায় এই অবহেলিত উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপকতা যেখানে প্রত্যাশিত ছিলো সেখানে এই ধরনের দূরত্ব আমাদের ব্যথিত করে। এই দূরত্বের অবসান হোক।
- দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র রুখতে হবে: আইজিপি
- ডিগবাজিতে বেকায়দায় তালহা আলম