দিন শেষে মজুরি ৪১ টাকা

আমিনুল ইসলাম, তাহিরপুর
ওএমএস চালু থাকায় খাদ্য গুদাম থেকে দৈনিক দুই মেট্রিক টন চাল খোলা বাজারে ডিলারদের নিকট দিতে হয়। মালামাল পরিবহনের বিনিময়ে ডিলাররা প্রতি টনে শ্রমিক মজুরি দেয় দুইশত পঞ্চাশ টাকা। দুই টনে মিলে মজুরি পাই পাঁচশত টাকা। তাও আবার সপ্তাহে পাঁচ দিন। গুদামে শ্রমিক সংখ্যা ১২ জন। সন্ধ্যাবেলা টাকা ভাগ করে পাই জনপ্রতি ৪১ টাকা। ওএমএস বন্ধ থাকলে তো আর ৪১ টাকাও মিলে না।
এভাবেই কথাগুলো বললেন, তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য গোমের লেবার সর্দার সুধন চন্দ্র বিশ^াস (৬৫)। বয়সের ভারে ন্যুজ সুধন বিশ^াস ১৯৮০ সাল থেকে তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই লেবার সর্দার হিসাবে কাজ করে আসছেন।
তিনি আরও জানান, ছেলেমেয়ে সহ সব মিলে ১২ জন সদস্য তার পরিবারে। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা আমার পরিবারের প্রতি দয়া পরবেশে আমার এক ছেলে নিবাস বিশ^াস কে গুদামের খন্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসাবে সাময়িক নিয়োগ দিয়েছে। প্রতি মাসে সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে চলে আমার সংসার। বছরে গড়ে ৪ থেকে ৫ মাস কাজ থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খাদ্য কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছর সরকার শ্রমিক মজুরি নবায়নের জন্য দরপত্র আহবান করে থাকেন। কিন্তু সুবিধাভোগী সিন্ডিকেটচক্র কাজ পাওয়ার জন্য অধিকতর নি¤œদরে কাজ বাগিয়ে নেয়। ফলে নি¤œ আয়ের শ্রমিকগণকে নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করেন। ঐ সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ যতদিন উন্মেচিত না হবে ততদিন শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি হতে বঞ্চিত হবে।
তিনি আরও জানান, খাদ্য গোদামের শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে হলে মজুরি নবায়নের দরপত্র আহবান না করে বিকল্প পদ্ধতিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
গুদামের খয়াল (ওজনকারী) শৈলেন দাস (৫৫) বলেন, গুদামে খাদ্যবান্ধব ও এমএস না থাকলে বছরে দুই থেকে তিন মাস কাজ থাকে। অর্থাৎ বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান চাউল সংগ্রহের সময়। এ দুই মাসে দৈনিক গড়ে পাঁচশত করে রোজগার হয়। এছাড়াও পরিবহন ঠিকাদার যখন চাল প্রবেশ করায় তখন ঠিকাদার শ্রমিকদের টন প্রতি ৫৫ টাকা করে দেয়। অর্থাৎ গুদামের সরকারি ঠিদাদার প্রতি টনে মজুরী দেয় প্রতি টনে ৫৫টাকা। আর স্থানীয় ডিলার প্রতি টনে মজুরী দেয় ২৫০ টাকা।
তাহিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বিএম মুশফিকুর রহমান বলেন, খাদ্য গোদামের শ্রমিকরা ধানচাল সংগ্রহের সময় তাদের মোটামুটি ভাল রোজগার হয়। তাছাড়া তাছাড়া সারাবছর ভিজিডি, ভিজিএফ ও ওএমএস এর মালামাল তো খুবই কম। এগুলো খালাস করে যে শ্রমিকরা যে পরিমান টাকা পায় তা খুবই কম।