হিল্লোল পুরকায়স্থ, দিরাই
স্বামী-স্ত্রীর অমিল, মনের মানুষ অবাধ্য, বিয়ে-শাদী হচ্ছে না, বান, টোনা, কুফরী কাটানো, বিভিন্ন গোপন রোগ, যে কোন অসাধ্য কাজকে করে দেওয়া হয়। কাজ না হলে টাকা ফেরত। অবহেলা নয়, জীবনের শেষ চিকিৎসা মনে করে কাজ করো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফলাফল। লিফলেটে রয়েছে দৈত্য ও কবুতরের ছবি। ঠিকানাঃ নেত্রকোনা দুর্গাপুর, গারো পাড়া।
এমন ধরণের অনেক পোস্টারে দিরাই পৌরসভার ছেয়ে গেছে। নানা স্টাইলের প্রতারণার জাল বিছিয়ে বিভিন্ন চক্র এবঅবেই হাজারো মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করে আসছে। সরজমিন পৌরসভার দিরাই বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, একজন একজন মধ্যবয়সী নারী লিফলেট দেয়ালে দেয়ালে সাঁটাচ্ছেন। ওই নারীকে তিনি কেন এ কাজ করছেন এবং তান্ত্রিক চিকিৎসক কে চেনেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি সেখান থেকে দ্রæত চলে যান।
লিফলেটে বড় করে লিখা রয়েছে তান্ত্রিক গুরু জব্বার আলী। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০% চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে থাকি ইনশাআল্লাহ। তিনটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে লোভ, হিংসা ও অহংকার। আরও লেখা রয়েছে জীবনে কখন কাকে কাজে লাগে, বলা যায় না। বিশ্বাসে ভক্তি, ভক্তিতে মুক্তি, মানবসেবায় রোগীকে সু-পরামর্শ দেওয়া হয়।
শুধু তাই নয় তার মধ্যে একটা আইডি কার্ডও লাগানো হয়েছে। কার্ডে লেখা আছে- সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান উসিলা মানব সন্তান কামরুক কামাক্ষা নাগাল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এতে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম দেয়া হয়েছে।
পরিচয়পত্র
কার্ড নংঃ কু/উ/জে/শা-৯৫৭
পদবী: তান্ত্রিক সাধক
মোবা: ০১৯৩৩৯০১৩৬১
গর্ভঃরেজিঃ নং ১০৯০০/১১
এতে তান্ত্রিক সভাপতি ও মহাসচিবের স্বাক্ষর আছে।
এদিকে তান্ত্রিক জব্বার আলীর সাথে কথা বলেছেন এমন একজনের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমার নাম তপু চৌধুরী। আমি এই তান্ত্রিকের পোস্টার দেখে পোস্টারে থাকা নাম্বারে এমনিতে কল দিয়ে ছিলাম। আমি সরকারি চাকরি করি তার পরেও ওই তান্ত্রিক কে ফোন দিয়ে বলেছিলাম আমার চাকরি হচ্ছে না। সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরণের চাকরি হচ্ছে না। এই কথা শোনে তান্ত্রিক আমাকে বলেন, এটা কোন সমস্যা না আমি আপনাকে চাকরি পাইয়ে দিব। আপনাকে শুধু কোন ধরণের চাকরি করতে চান, কোথায় চাকরির জন্য যাচ্ছেন সেই ঠিকানা আমাকে জানাতে হবে। তারপর আপনি খুঁশি হয়ে যা দিবেন তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
তিনি আরো বলেন, এর আগে কিন্তু আপনার কেন চাকরি হচ্ছে না সেটা আমাকে খতিয়ে দেখতে হবে। তার জন্য দুই জোড়া কবুতর, চারটা জায়নামাজ, বিশ প্যাকেট ধুপকাটি কুরিয়ারে পাঠাতে হবে। অবশ্য আজকাল অনেকে এসব না পাঠিয়ে তার সমমূল্যের টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। আমি আমার লোক দিয়ে সে গুলো আনিয়ে নেই।
এদিকে পৌরসভার আনাচে কানাচে এরকম আরও অনেক কবিরাজ, বৈদ্য, তান্ত্রিকের পোস্টার সাঁটানো অবস্থায় দেখা যায়। পৌরসভার মজলিশপুরে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে সেখানে লেখা হয়েছে- বিসমিল্লাহ চিকিৎসালয়। তদবির পরিচালনায় মো: আমিরুল ইসলাম। মো: ০১৭২১৯২৯০৫৭ এখানে পাগল রোগী, জ্বীন-পরীর আছর গ্রস্থ রোগী সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়।
সেখানে কবিরাজের খোঁজে আসা একজন বয়স্ক মহিলাকে কেন তিনি কবিরাজের খোঁজ করছেন জানতে চাইলে তিনি টপ্রতিবেদক কে জানান তার নাতিনের লেখাপড়ায় মনোযোগ নাই। সারাদিন শুধু দুষ্টুমি করে তাই তিনি কবিরাজের খোঁজে এসেছেন।
এবিষয়ে কবিরাজ আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি এখন ঘুমে আছি, সন্ধ্যার পর কথা বলব।
এ ব্যাপারে দিরাই পৌর শহরের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, প্রতারণামূলক এমন চক্রের পোস্টার পৌরসভার বিভিন্ন বাজার ও পাড়ার অলিগলিতে ছেয়ে গেছে। এ যুগেও এমন প্রতারণামূলক পোস্টার কি করে প্রকাশ্যে লাগানো হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছি না। প্রতারণামূলক পোস্টার দেখে সহজ সরল মানুষজন টাকাপয়সা খোয়াচ্ছে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোক্তাদির হোসেন বলেন, এভাবে লিফলেট লাগানোর জন্য পুলিশ কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। তবে এই তান্ত্রিক বা কবিরাজের খপ্পরে পড়ে কেউ প্রতারিত হলে বা নির্যাতনের শিকার হলে তখন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, পোস্টার লাগানোর বিষয়টি দেখবেন পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে যদি মেয়র আমাদের সহযোগিতা চান আমরা উনাকে সহায়তা করব।
পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, পৌরসভার অনুমতি ছাড়া লিফলেট, পোস্টার লাগানো অপরাধ। কিন্তু কোন রকম অনুমতি ছাড়াই এই তান্ত্রিক বা কবিরাজদের পোস্টার/ লিফলেটগুলো আমাদের অগোচরে লাগানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব প্রতারণামূলক পোস্টার/লিফলেটগুলো দেখা মাত্র ছিঁড়ে ফেলার নির্দেশ পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দিয়েছি আমি।
- পাঠদান চলে গাছতলায়/ বরাদ্দ থাকলেও পাঠদানের অস্থায়ী শেড করে নি ঠিকাদার!
- মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছে সরকার- সমাজকল্যাণ সচিব