সর্বমহলের সাধারণ প্রত্যাশা সত্বেও দুর্নীতিবিরোথী জায়গায় বাংলাদেশ কার্যত কোনো উন্নতি করতে পারেনি। বিশ্বের বৃহৎ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর সমান্তরালে থেকে জাতি হিসাবে আমাদের মাথা হেট করার প্রবণতা অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০২২ সনের দুর্নীতির ধারণা সূচক নিয়ে ১৮০টি দেশে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল সংক্রান্ত প্রতিবেদন মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১ সনের চাইতে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের আরও এক ধাপ অবনমন ঘটেছে। অর্থাৎ ২০২১ সনে সবচাইতে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্রমিকে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিলো ১৩ সেখানে ২০২২ সনে এই অবস্থান দাঁড়ায় ১২ নম্বরে। গত এক বছরে দেশে দুর্নীতিবিরোধী কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হয়ে নেতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। জাতি হিসাবে এ আমাদের জন্য লজ্জার। অদ্ভুত বাস্তবতা হলোÑ মুখে আমরা প্রতিনিয়ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচুর কথা বলি কিন্তু কার্যক্ষেত্রে করা হয় ঠিক উল্টোটা। ফলে কেউ দুর্নীতি করতে এখন ভয় পায় না। বুক ফুলিয়ে দুর্নীতির মহাযজ্ঞে নেমে পড়ে। এই দুর্নীতিবাজরা বরং সমাজে, রাষ্ট্রে ও প্রতিষ্ঠানে প্রভাব তৈরিকারী ভূমিকায় থাকেন। বলা চলে এদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশের সবকিছু।
দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তৃতি ও সামাজিকীকরণের ফলাফল হয়েছেÑ এখন আমাদের সমাজব্যবস্থা আগের মত আর দুর্নীতিবাজদের ঘুণা করে না। বরং দুর্নীতিবাজদের বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। তাদের প্রতি রয়েছে ভয় ও আনুগত্যের ভাব। দুর্নীতি ও অসৎ পন্থায় যে যত বেশি টাকা করতে পেরেছে তার স্তাবক ও অনুগত লোকসংখ্যা তত বেশি দেখা যায়। এই টাকাওয়ালারা সমাজ-রাষ্ট্রের বড় বড় পদে যেতে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করতে পারে এখন সহজভাবেই। ফলে বিরুদ্ধ ¯্রােতে সংগ্রাম করে গুটিকয় যে ক’জন এখনও নিজেকে দুর্নীতির কাদা থেকে মুক্ত রেখেছেন তাদের আর কোথাও দেখা যায় না। এরা থাকেন উপহাসের বস্তু হয়ে সকলের আড়ালে। নির্বাচনে দাঁড়ালে এরা গন্ডা কয়েক ভোটও টানতে পারেন না। এই যখন হয় সমাজ বাস্তবতা তখন দুর্নীতি বিরোধী সফলতা পাওয়ার জায়গাটা সুকঠিন হয়ে পড়ে নিঃসন্দেহে। আমরা এখন এমন এক সময়ই পার করছি।
ক্রমাগত দুর্নীতির ধারণাসূচকে আমাদের নি¤œগামী অবস্থান বৈশ্বিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ভীষণ সংকটে পড়ে গেছে। কোথাও আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর উপায় নেই। দুর্নীতির ্উপজাত হয়ে আসে ক্ষমতা ও ভোগের সংস্কৃতি। এখন কেউ নিজের পদ-পদবী, ক্ষমতা কেন্দ্র হারাতে চান না। যেকোনোভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এমন কিছু নেই যা তারা করেন না। যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেও নষ্ট করে ফেলেছে। অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেÑ এটি সাধারণ সত্য। সুতরাং দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতি যে রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়িত করবে এটি খুব স্বাভাবিক বিষয়। এই দুষ্টচক্র থেকে কি মুক্তির কোনো পথ নেই?
বাংলাদেশ প্রচুর সম্ভাবনার এক জনপদ। এখানকার মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু, মানুষ; সবকিছু মিলিয়ে সারা বিশ্বের বুকে এক নম্বর হওয়ার যাবতীয় উপাদান নিয়ে অস্তিত্বমান রয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারি না। পৃথিবীর তালেবর রাষ্ট্রগুলো নানা ছুতোনাতায় আমাদের নানা বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ পায়। আমাদের উপদেশ বিলিয়ে আনন্দ উপভোগ করে। আমরাও শশব্যস্ত থাকি তাদের কৃপাধন্য হতে। কী নিদারুণ আত্মপ্রবঞ্চনা! আমাদের বোধের চক্ষু কি এভাবেই অন্ধ হয়ে থাকবে? কেউ কেউ বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের ভোগ প্রবণতা বন্ধ করতে পারলেই আমরা উন্নতি করতে পারব। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধবে কে? দুর্নীতিকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে খুব বেশি দিন টিকে থাকা যাবে না। আমাদের প্রাণপ্রাচুর্যের দেশটি পৃথিবীর বুকে অস্পৃশ্য হয়ে উঠবে, এও আমাদের দেখতে হবে?
- এসএম বকস কল্লোল’র মৃত্যুতে ছাতক প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক
- ভারতীয় ৫৫ বস্তা চিনিসহ গ্রেফতার ২