দিরাই প্রতিনিধি
প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির রোষানলে পড়েছেন এক শিক্ষক। তবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বলছেন, শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সহকারি শিক্ষক লাল মোহন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং পরবর্তিতে ম্যানেজিং কমিটি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে।
জানা গেছে, দিরাই পৌর সদরে অবস্থিত শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত কমিটিতে সদস্য ছিলেন শিক্ষক লাল মোহন দাস। তদন্তে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এতে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহকারী শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হন। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র আদায় করে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান।
সহকারী শিক্ষক লাল মোহন দাস বলেন, যৌন হয়রানির বিষয় বানোয়াট। প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাসের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ করার বিষয়ে তদন্ত কমিটিতে আমি সদস্য ছিলাম। তদন্তে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। এতে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। আমাকে দায়িত্ব পালনে হয়রানিসহ হুমকি-ধমকি দেন। প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে আমাকে বিদ্যালয়ের অফিসে কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে প্রধান শিক্ষক, সভাপতি ও অপরিচিত ৪-৫ জন লোক আমাকে গালিগালাজসহ খুনের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করে প্রতিকার চাই। তদন্তে ম্যানেজিং কমিটি মেয়াদোর্ত্তীণ ও আংশিক প্রমাণিত হওয়ায় পদত্যাগপত্র বৈধ নয় উল্লেখ করে স্বপদে পুর্নবহাল করার জন্য পত্র প্রেরণ করেন ডিজি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগদানে অনীহা জানালে সিলেট অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিতভাবে জানাই। পুর্নবহালের লিখিত পত্র প্রেরণ করেন উপ-পরিচালকও। তবে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক যোগদানে অপারগতা জানালে সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত দেই। ৭ দিনের মধ্যে ওই শিক্ষককে স্বপদে পুর্নবহাল করে বোর্ডকে অবহিত করার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে নির্দেশনা দেন বোর্ডের চেয়ারম্যান।
পুর্নবহালের নির্দেশনা পেয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি ভিন্নখানে প্রবাহিত করতে আমার বিরুদ্ধে একটি বানোয়াট অভিযোগ এনে কিছু শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে মানববন্ধন করান। অথচ তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগ নেই এবং পদত্যাগপত্রেও অভিযোগের বিষয়ে উল্লেখ নেই।
দিরাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, সহকারি শিক্ষক লাল মোহন কর্তৃক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। ভিকটিম শিক্ষার্থীর স্বজনদের রোষানলে পড়ে স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগপত্র দিয়ে বিদ্যালয় ছাড়েন তিনি। পরে তার পদত্যাগপত্র ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, পরে শিক্ষক লালমোহন দাস শিক্ষা অধিদপ্তরে পুর্বহালের আবেদন করেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সভাপতিকে পুর্নবহালের পত্র দেন। তবে বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক ছাত্রীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা ওই শিক্ষককে যোগদান করতে দিচ্ছি না। এমনকি তাকে পুনর্বহাল না করতে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী দাস বলেন, শিক্ষক লাল মোহন দাস পদত্যাগ করেছেন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে। দুর্নীতির বিষয়টি এর সাথে সম্পৃক্ত নয়। তবে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত কমিটিতে শিক্ষক লাল মোহন দাসের সদস্য থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
- শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া/ দারিদ্রতাকে হঠাতে হবে
- জগন্নাথপুরে দেশে ফিরছেন অসংখ্য প্রবাসী