বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় বালু-পাথর মহাল ধোপাজান-চলতি নদী লুটে-পুটে খাচ্ছে একদল অসৎ ব্যবসায়ী। এই মহাল থেকে গত চার বছর ধরেই নানা কৌশলে বালু-পাথর উত্তোলন করে বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। লুটপাট ঠেকাতে মাঝে মধ্যে অভিযান হলেও প্রভাবশালী লুটপাট চক্রের হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। মঙ্গলবার দুপুরেও নদীতে অভিযান চালিয়ে ছয় শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, খবর পেলেই অভিযান করা হয়, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ওখানে সার্বক্ষণিক থাকা কঠিন হয়।
ধোপাজান চলতী নদী বালু পাথর মহাল সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বশেষ ১৪২৫ বাংলা সনে ইজারা হয়। গেল চার বছর এই জলমহাল ইজারাবিহীন ছিল। এসময়ে এই মহাল আরও বেশি খুবলে খেয়েছে প্রভাবশালীরা। নদীর পাড় কাটা দিনে-রাতে বোমামেশিন চালিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু-পাথর জব্দ করে নিলাম করা হয়। বালু-পাথর নিলামে নেবার পর আরেক সুযোগ তৈরি হয় লুটেরা চক্রের। তারা নিলাম বালু-পাথরের স্তুপ অক্ষত রেখেই ওই নিলামের বালু পাথরের অজুহাতে কোটি কোটি টাকার বালু-পাথর উত্তোলন করে প্রকাশ্যে নেবারও অভিযোগ আছে।
বালু পাথর ব্যবসায়ী সাজ্জাদুর রহমান পলিন বললেন, ধোপাজান চলতি নদীর মুখে পুলিশের চেকপোস্ট মাঝে মধ্যে থাকে। চেকপোস্টে রশিদ দেখে নিলামকৃত বালু-পাথর বোঝাই নৌকা ছাড়া হলে অতিরিক্ত নেবার সুযোগ কম। তিনি বললেন, ওখানে পুলিশের সঙ্গে সিভিল প্রশাসনসহ অন্যদেরও যুক্ত রাখলে অনিয়মের সুযোগ কমে যাবে।
ডলুরার একজন বালু পাথর ব্যবসায়ী জানালেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাইয়ারগাঁও বাজার থেকে কাইয়ারগাঁও গ্রামের মাথা পর্যন্ত এবং বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার কালীপুর ডলুরা থেকে আদাং পর্যন্ত প্রতিদিন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু পাথর উত্তোলন করা হয়। কিছুদিন আগেও মধ্যরাত থেকে শেষ রাত পর্যন্ত ওখানে অর্ধশতাধিক ড্রেজার মেশিন চলতো। কয়েকদিন হয় ২৪ ঘণ্টা চলছে ড্রেজার মেশিন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বা অভিযান হবার আগেই এরা জেনে যায়। অভিযানের সময় নদী থাকে একেবারে শূণ্য। প্রভাবশালী বালু উত্তোলন কারীদের মধ্যে সুনামগঞ্জ শহরের কিছু ব্যবসায়ী, শহরতলির মনিপুরহাটি ও লালপুরের অসৎ ব্যবসায়ীরাই বেশি।
মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাফিউল মাজলিবুন রহমান নদীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাবার সময় পাঁচ ট্রলার বালু-পাথরসহ ছয় জনকে আটক করেন। এরা হলো, আজিজুর রহমান, আবির ইসলাম, সুরাব মিয়া, শাহীন মিয়া, মহসিন মিয়া ও রানা মিয়া। এদের সকলের বাড়ী ধোপাজান চলতি নদীর পাড়ের বিভিন্ন গ্রামে। এরা সকলেই ধোপাজান চলতি নদীতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বললেন, ধোপাজান চলতি নদীর মুখে এখন পুলিশ চেকপোস্ট নেই। ওখানে চেকপোস্ট করার মত অতিরিক্ত পুলিশও নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিনহা বললেন, ধোপাজান চলতি নদী বালু মিশ্রিত পাথর খনি হওয়ায় খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এটি ইজারা প্রদান বন্ধ রয়েছে। এই সময়ে ওখানে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত পাথর নিলামের মধ্য দিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে বহুবার। এই মহালে অবৈধ বালু পাথর উত্তোলন ঠেকাতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। তবে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে রাতে অভিযান চালানো কঠিন হয়।
- শান্তিগঞ্জে নদী ভাঙনে বিলীন সড়ক/ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছয় গ্রামের মানুষ
- পাঁচ লক্ষ টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ