সরকারি কর্মসংস্কৃতি নিয়ে একটি নেতিবাচক গল্প প্রচলিত রয়েছে বহুদিন ধরে এবং এটি সকলের জানা। সকলের জানা এই গল্পটি এরকমÑ কোনো এক প্রকল্পের মাধ্যমে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পরবর্তী কর্মকর্তা এসে ভাবলেন এখানে পুকুরটি বেমানান। তিনি নতুন আরেকটি প্রকল্প নিয়ে পুকুরটি ভরাট করলেন। পরের কর্মকর্তা ভাবলেন এরকম জায়গায় যদি একটি পুকুর না থাকে তাহলে চলে কী করে। তিনি আরেক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করলেন এবং মাটি খনন করে পুকুর বানালেন। এইভাবে চলতে থাকল পুকুর খনন ও ভরাটের পালা আর সরকারি টাকার শ্রাদ্ধকর্ম। এটি গল্প। বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। কিন্তু গল্পের সারমর্মের ভিতর যে ইঙ্গিত তার নমুনা হরহামেশাই আমরা দেখতে পাই বিভিন্ন কাজে। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা গেলÑ তাহিরপুর উপজেলার বৌলাই নদী খনন করে মাটি ফেলা হচ্ছে নদী লাগোয়া তীরে। সেই মাটি বৃষ্টি—বর্ষায়—প্লাবনে—ে¯্রাতে আবারও নদীতে এসে পড়ছে। তাহিরপুর সদর সংলগ্ন বৌলাই নদীর তলদেশ গভীর করতে ৬ হাজার ৭০০ মিটার খনন কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয় ৭ কোটি ৩২ লাখ টাকায়। টাকার অংক নেহায়েৎ মন্দ নয়। ঠিকাদারের ব্যবসাপাতিও খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে খারাপ যা হওয়ার তা হবে নদী ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলের। নদীর মাটি যদি আবার নদীতেই এসে পড়ে তাহলে এই নদী খননের মাজেজা কী? গল্পের সেই ভরাট ও খননের পৌনপুনিকতার জন্য?
নদীর মাটি তুলে কোথায় ফেলা হবে তার নিশ্চয়ই নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনায় অবশ্যই একথা বলা নেই যে, খননকৃত মাটি নদী সংলগ্ন তীরেই রাখতে হবে যাতে সেই মাটি আবার নদীতেই এসে পড়ে। ঠিকাদার নিরাপদ স্থানে মাটি সরিয়ে রাখছেন না কেন? এটি দেখভালের দায়িত্ব যে সরকারি কর্তৃপক্ষের তাঁরা চোখ বন্ধ করে রেখেছেন কেন? পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, যে মাটি পুনরায় নদীতে পড়বে ঠিকাদার তা আবার খনন করে দিবেন। এ ধরনের কথার কোনো অর্থ নেই। সাফ কথা হলো নদীর মাটি নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে যাতে সেই মাটি নদীতে এসে না পড়ে। নদী থেকে খনন করা মাটি নিয়ে প্রচুর ব্যবসা পাতির খরর আমরা জানি। বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাটি উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। নদী খননের মাটি বিক্রি থেকে এক টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দেন না ঠিকাদাররা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে এই ব্যবসা পরিচালিত হয়। এই সুনামগঞ্জ শহরে এই ধরনের মাটি কিনতে হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে। ড্রেজিং ব্যবসা এখন বড় ও লাভজনক অবৈধ ব্যবসা। এই ড্রেজিং ব্যবসাকে সরকারি পরিকল্পনার আওতায় এনে নদীর উপযুক্ত স্থান থেকে মাটি খনন করে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হলে একদিকে নদী খননের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ কমানো সম্ভব হতো অন্যদিকে খননকৃত মাটির রয়েলটি বাবদ সরকারি কোষাগারে প্রচুর টাকা জমা হতে পারে। এখন লুকিয়ে চাপিয়ে বহুজনকে ম্যানেজ করে পরিচালিত অবৈধ ড্রেজিং ব্যবসার মাটি উচ্চ দামে বিক্রি হয়। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে ও পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা করে এই ব্যবসার অনুমতি দেয়া হলে মানুষও কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে মাটি কিনতে পারত।
যাহোক, বৌলাই নদীর খননকৃত মাটি যাতে পুনরায় নদীতে পড়ে আবারও খননের প্রয়োজনীয়তা তৈরি না করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানাই। শুধু বৌলাই নয় যেখানেই অনুরূপ খনন কাজ চলছে সর্বত্র একই ধরনের নিরাপদ ডাম্পিং ব্যবস্থা চালুর দাবি আমাদের।
- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
- ব্রয়লার মুরগীর সিন্ডিকেটকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি ক্যাবের