শুকনোয় ধূলা, বৃষ্টি হলে কাদা আর জলাবদ্ধতা, রাতে মশা; এই নিয়ে চলছে নাগরিক জীবন। একটু উন্নত জীবন যাপনের আশায় মানুষ নগরে এসে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হয়। সুযোগ সুবিধার সমাহারের কারণে নগর হয়ে উঠে নানা জায়গা থেকে আগত মানুষের মিলনমেলা। কিন্তু শহুরে নাগরিক জীবন যে সর্বাবস্থায় সুখকর বা আরামপ্রদ নয় বরং নানা দুর্ভোগ—কষ্টে ভরপুর সেকথা শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারেন। এমন নাগরিক যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েই একদা কবি বলেছিলেনÑ দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে জেলা শহরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা পশ্চিমবাজার, নতুনবাজার, পোস্ট অফিসের সামনের এলাকায় বৃষ্টির কারণে তৈরি হওয়া কাদামাটির যন্ত্রণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কর্তব্যবোধের ঘাটতি, অপরিকল্পিত সড়ক এবং নিত্যদিন পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার অভাবের কারণে এই দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। পৌরমেয়র এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সচেতন কর্তব্যনিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন সড়কে পানি ছিটানোর দাবি করেছেন। এই সড়ক ব্যবহারকারী নাগরিকরা নিজেদের কষ্টের কথা বলেছেন। এ তো গেলো কেবল সড়কে তৈরি হওয়া অনাহুত কাদামাটির যন্ত্রণাদগ্ধতার কথা। কিন্তু নাগরিক বিড়ম্বনার এই শেষ নয়। আরও বহু যন্ত্রণা বিদ্যমান।
শহরের বহু এলাকা সামান্য বৃষ্টিপাতে তলিয়ে যায়। জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে অশেষ কষ্ট সহ্য করতে হয় নদী তীরবর্তী অঞ্চলসহ বিভিন্ন মহল্লাবাসীকে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থার অভাব প্রকট। অনেক মহল্লার বাড়িঘরে পানি ঢুকে যায় অল্প বৃষ্টিপাতেই। পৌরসভার পক্ষ থেকে ড্রেন নির্মাণ করে জলাবদ্ধতা্ দূর করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে বটে তবে ক্রমবর্ধিত অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে ওই চেষ্টা সার্থক হতে পারছে না। এর উপর আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি শহরের ঐতিহ্যবাহী খালগুলো। এই খালগুলো থাকলে সহজেই পানি নিষ্কাশন হত। এছাড়া শহরবাসীর প্রধানতম বিড়ম্বনার নাম হলোÑ মশা। শহরের এমন এলাকা নেই যেখানে সন্ধ্যা রাতে মশার দাপট দেখা যায় না। সন্ধ্যা রাতে অসহ্য অবস্থার সম্মুখীন হন শহরবাসী। মশার দাপটের কাছে একান্তই অসহায় হয়ে পড়েছেন মানুষ। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা তার তীব্র ক্ষমতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকালয়ে। মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতি রাতে একাধিক কয়েল জ্বালাতে গিয়ে নগরবাসীর খরচের খাতায় অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে। আরেক যন্ত্রণা হলোÑ ধূলা। শুকনো সময়ে শহরের প্রতিটি সড়ক ধূলি ধূসরিত থাকে। অতিরিক্ত মশা ও ধূলা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম এক ঝঁুকি। নানাবিধ রোগ—বালাইর কারণ এসব।
নাগরিক দুর্ভোগ কমানোর জন্য আমরা কেবল পৌরসভার মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকি। ভুলে যাই নিজেদের নাগরিক কর্তব্যবোধের কথা। সকলে মিলে নিয়ম মেনে এবং একটু সচেতন আচরণ করলে বহু নাগরিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সবকিছুতে পৌর অভিভাবক হিসাবে পৌরসভার অগ্রণী ভূমিকা থাকতে হবে। নাগরিকদের কর্তব্য পালনের বিষয়টিও নজরদারির দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষেরই বটে। উপরে যেসব দুর্ভোগের কথা বলা হলোÑ এগুলো নিয়ন্ত্রণে পৌর কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা রাখি। সীমাবদ্ধতা সব জায়গাতে আছে। রয়েছে সম্পদের অপর্যাপ্ততা, তহবিলের স্বল্পতা। কিন্তু আমরা চাই সদিচ্ছা দেখতে। সদিচ্ছা থাকলে অপরাপর সমস্যাগুলো সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। পৌর নাগরিকদের অভিভাবক হিসাবে পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ আন্তরিক ও কর্মিষ্ঠ হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। এইসব নাগরিক সমস্যা দূরিকরণে আপনারা প্রতিটি পাড়া মহল্লায় উদ্দীপনা তৈরি করুন। সকলের অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করুন। যাতে সকলে মিলে আমরা আমাদের শহরটিকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে পারি। শহরের বিলুপ্ত ও দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর পুনরুদ্ধারে হাইকোর্ট থেকে যে নির্দেশনা এসেছে তা বাস্তবায়ন করাটাও সুন্দর শহর দেখার অভিপ্রায়ের সাথে সম্পর্কিত। এ ব্যাপারেও দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য।
শিরোনাম:
- ‘ডাইনামিক ইংলিশ গ্রামার এন্ড কম্পোজিশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- বিশ্বম্ভরপুরে চান্দিনা ভিটের লাইসেন্স বিতরণ
- বিশ্বম্ভরপুরে জাতির পিতার ‘জুলিও কুরি’ পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন
- সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আন্ত:ক্লাব বির্তক প্রতিযোগিতা
- বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তিতে জামালগঞ্জে সভা