নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়ক যেন মরণফাঁদ

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর ও মধ্যনগরসহ ভাটি অঞ্চলের যোগাযোগ পথ কমাতে নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়ককেই কাজে লাগাতেন ভাটি অঞ্চলের বাসিন্দারা। লাখো মানুষের যোগাযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির এখন বেহাল দশা। এই সড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর থেকে ফতেহপুর হয়ে ১৭ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ হয় ৫০ বছরেরও বেশি আগে থেকেই। এই সড়ক চালু থাকলে সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে তাহিরপুর, মধ্যনগরসহ ভাটি অঞ্চলে যাতায়াত যোগাযোগ আট কিলোমিটার কমে যায়। না হয় বিশ^ম্ভরপুর হয়ে আট কিলোমিটার ঘুরে তাহিরপুরে যেতে হয়। সড়কটি চালু থাকলে ফতেহপুর ইউনিয়নবাসী এবং জামালগঞ্জের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুরের যোগাযোগও সহজ হয়।
লাখো মানুষের যোগাযোগের এই সড়কটি গেল জুনের বন্যায় একেবারে নিশ্চিহৃ হয়ে গেছে। এরপর আর এই সড়কে কোন কাজ হয়নি বললেই চলে।
ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সীতেশ রঞ্জন তালুকদার বললেন, ‘এই সড়কে শতকোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত কাজ এবং অনিয়ম হওয়ায় সরকারি টাকার অপচয় হয়েছে, মানুষের কোন কাজে আসে নি। লাখো পথচারীর ভোগান্তি ৫০ বছর আগের মত এখনো আছে। সড়কের আবুয়া নদীর উপর কোপাগাংয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু হয়েছে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেতুর অ্যপ্রোচ ভেসে গেছে। সেতুটির স্থান নির্বাচন করা সঠিক হয় নি। এখন এই সেতু এলাকা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হেকিম বললেন, সেতুটি ৩০ ফুট উত্তরে সরিয়ে করলে সমস্যা হতো না। এখানে করে অর্থের অপচয় হয়েছে। মানুষের কোন কাজে আসবে না সেতুটি। তিনি জানালেন, সড়কের বারুঙ্কা গ্রামের পাশের তিন কিলোমিটার সড়ক অংশে এখন গিয়ে বলতে হচ্ছে, ‘এইখানে এক সময় পাকা সড়ক ছিল।’ মাটি সরে পাকা অংশ ভেঙে সড়কের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পবিত্র ভূষণ তালুকদার বললেন, আবুয়া নদীর উপর কোপাগাংয়ের সেতু নির্মাণ করার ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে। ফতেহপুর সেতু’র কাজ হয়েছে ২০২০ সালে, এখনো এই সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক হয় নি। সেতুর অ্যাপ্রোচ হবে, কিন্তু কোপাগাংয়ের জন্য পথ বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ সরকারি টাকা গচ্ছা যাবে। মানুষের দুর্ভোগ থেকেই যাবে। তিনি বললেন, নি¤œমানের এবং অপরিকল্পিত কাজের জন্য এই সড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক নিয়ামতপুর-তাহিরপুর সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বললেন, কোপাগাংয়ের সেতুটি এই অংশ দিয়েই আরও কিছু দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে করতে হবে। ফতেহপুর সেতুর কাজ দুই বছর আগে শেষ হলেও ওই সেতুর জন্য বরাদ্দ ছিল ২২ কোটি টাকা, যে প্রকল্প থেকে এই সেতুর অর্থ বরাদ্দ ছিল, মেয়াদ শেষ হবার পর তারা যা কাজ হয়েছে অর্থাৎ ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল দিয়ে বাকী টাকা ফেরৎ নিয়ে গেছে। এখন আলাদা দরপত্র প্রক্রিয়ায় এই কাজ করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সড়কের অন্য ভাঙা অংশতে কাজ করানোর জন্য দরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।