নৌযান দেখেই ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণের আশায় আসছেন বানভাসি মানুষ

বিশেষ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জে নৌযান দেখলেই ত্রাণের আশায় ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসছেন বানভাসি মানুষ। সাঁতার কেটে, গলাসমান পানিতে নেমেও নৌযানের কাছাকাছি আসছেন তারা। তবে বেশিরভাগেই ফিরছেন শূন্য হাতে। প্রতিযোগিতায় না পেরে বৃদ্ধ ও শিশুরা ভীষণ বদনেই ফিরছেন বেশি। সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকাজুড়েই এই অবস্থা।
প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে গেল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। শুক্রবার ভোর তিনটায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ডুবে যায় জেলার ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের অনেক বাড়িঘরের ছাল ছুঁয়েছে ঢলের পানি। বানভাসি মানুষ সরকারি বেসরকারি দুতলা, তিন তলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। তালা দেওয়া অনেক দুতলা গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের তালা ভেঙে জীবন বাঁচিয়েছেন লাখো মানুষ। ভয়াবহ বন্যার তা-বে ঘরে থাকা ধান-চাল, জমিতে থাকা সবজী, পুকুরের মাছ সবই ভেসে গেছে। পানি কিছুটা কমলেও ঘরে খাবার নেই, বাইরে কাজ নেই। সিংহভাগ দোকানপাঠও এখনো খুলতে পারেন নি দোকানীরা। এই অবস্থায় খাদ্য সংকট জেলার বেশিরভাগ এলাকায়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত সকলেই মহাবিপদে পড়েছেন। নদীতে হাওরে নৌযান দেখলেই ত্রাণের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে আসছেন নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা। ত্রাণ পাবার মর্মস্পর্সি আকুতি সকলের কণ্ঠে।
বুধবার দুপুরে সুনামগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে প্রায় তিনশ’ পেকেট ত্রাণ নিয়ে কোস্টগার্ডের একটি দল সদর উপজেলার গৌরারংয়ের দিকে রওয়ানা দিলে পথেই ইব্রাহিমপুর, সদরগড় ও অক্ষয়নগরে হাজারো বানভাসি ঝুঁকি নিয়ে তাদের নৌযানের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। ত্রানবাহী নৌযান অক্ষয়নগর, পূর্ব-পশ্চিম সদরগড় ও ইব্রাহিমপুরে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও বানভাসি মানুষের ভিড় দেখে নৌযান ভেড়াতে পারেননি কোস্টগার্ডের সদস্যরা। পরে নৌযান থেকেই ত্রাণের বস্তা ছুঁড়ে দিতে হয়েছে ত্রাণ প্রত্যাশীদের। এই অবস্থা চলছে স্থানে স্থানে।
ইব্রাহিমপুরের রফিক মিয়া বললেন, পাঁচদিনের মধ্যে দুবেলা ত্রাণের খিছুরি পেয়েছেন, একবার চিড়া, মুড়ি পেয়েছিলেন। এই খেয়েই বেঁচে আছেন পরিবারের সকলে। ত্রাণ প্রত্যাশী রেজা উদ্দিন, সুলতানা ও রবি একই ধরণের মন্তব্য করলেন।
কোস্টগার্ডের লেফটেনেন্ট সাব্বির আলম বললেন, আমরা যে পরিমাণ ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি, এর চাইতেও ত্রাণ প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা বেশি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পরবর্তীতে আরও বেশি ত্রাণ নিয়ে যাবার চেষ্টা করবো আমরা।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন দাবি করলেন, বন্যাদুর্গতদের কেউ না খেয়ে নেই। প্রতিদিন ৪৪ হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬৭৫ টন চাল, ১২ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ৮০ লাখ নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০ লাখ টাকা আমাদের হাতে রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বন্যার্তদের ৫৮ লাখ টাকা সহযোগিতা দিয়েছেন।