পণতীর্থ ও ওরস/ মেলার রাজস্ব আদায় ও বণ্টনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করুন

তাহিরপুর উপজেলার পণতীর্থ পুন্যস্নান ও শাহ আরেফিনের (রহ.) ওরস অত্রাঞ্চলের দুই প্রধান ধর্মাবলম্বীর বৃহৎ মিলনমেলা। পাশাপাশি দুই দিনের ব্যবধানে কাছাকাছি জায়গায় অবস্থিত এই দুই মিলনমেলায় সমাবেশ ঘটে কয়েক লক্ষ ধর্মপ্রাণ মানুষের। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা স্থান থেকে এই দুই স্থানে ঢল নামে মানুষের। আর ক’ দিন পরই অর্থাৎ ১৯ মার্চ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই পবিত্র উৎসব দুইটি। এই দুই উৎসবকে ঘিরে জমে উঠে জমজমাট মেলা। বাহারী পণ্যের সমগম ঘটিয়ে হরেক রকমের দোকানী দোকান খোলে বসেন এই মেলায়। এইসব দোকান থেকে আদায় হয় প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব। একটি অবিন্যস্ত ও নিয়ন্ত্রণহীন কাঠামোর মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয় মেলার রাজস্ব আদায় কার্যক্রম। মেলা থেকে আহরিত আয়ের যথাযথ হিস্যা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পায় না বলে অভিযোগ সংস্লিষ্ট উৎসব আয়োজকদের। তাদের অভিমত হলো, একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে মেলা থেকে জমা আদায় ও বণ্টনের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখানে প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না কোনো নিয়ন্ত্রণ। অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটি মেলাস্থলটি প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দেয়া কিংবা প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে জমা আদায়ের দাবি জানিয়েছেন। শাহ আরেফিন (রহ.) ওরস পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অবশ্য প্রচলিত পদ্ধতিতে জমা আদায়ের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তবে ওরস এলাকার স্থানীয় লোকজন আবার এ ব্যাপারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও নিলাম আয়োজনের পক্ষে। তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জমা আদায়ের পক্ষেই মত দিয়েছেন।
এখানে অদ্বৈত জন্মস্থানের পুন্যস্নান ও শাহ আরেফিনের (রহ.) ওরস পরিচালনার জন্য পৃথক পরিচালনা কমিটি আছে। এখানে রয়েছে বেশ কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। দুই ধর্মীয় উৎসব আয়োজন, পরিচালনা ও সম্পন্ন করতে প্রচুর খরচের প্রয়োজন পড়ে। মূলত পুন্যার্থীদের স্বেচ্ছাপ্রদত্ত দানের উপর নির্ভর করেই এই উৎসবগুলো আয়োজিত হয়। ধর্মীয় উৎসবের অনুষঙ্গ হিসাবে আয়োজিত মেলাগুলোও এই উৎসব পরিচালনার সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং মেলা থেকে আদায়কৃত অর্থের প্রধান অংশীদার হওয়ার কথা উৎসব আয়োজক কমিটির। যথাযথ হিস্যা পেলে যেমন উৎসব আয়োজনের জন্য অর্থের নিশ্চিত একটি উৎস তৈরি হয় তেমনি এই টাকা দিয়ে উভয় জায়গার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি করাও সম্ভব হবে। আগত পুন্যার্থীদের জন্যও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। এই বিবেচনায় স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এবং উৎসব আয়োজক কমিটির সমন্বয়ে মেলার জমা আদায়ের বিষয়টি পরিচালিত হওয়াটাই যথোপযুক্ত বলে আমরা মনে করি। এটি করা গেলে সরকারের রাজস্ব প্রপ্তির পরিমাণও বাড়বে।
প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হলে মেলায় জমা আদায়ের একটি নীতিমালা থাকবে। এখন যেমন ইচ্ছামাফিক জমা আদায় করা হয় তার অবসান ঘটবে। সংশ্লিষ্ট উৎসব আয়োজকরা জানিয়েছেন এই দুই মেলা থেকে এখন কমপক্ষে ৪০ লক্ষ টাকা জমা আদায় হয়ে থাকে। অংকটা নেহায়েৎ কম নয়। এরকম একটি বৃহৎ মেলায় সরকারি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না তা কোনো কাজের কথা নয়। মেলার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বিধানসহ সব বিষয়েই সরকার ভূমিকা রাখে। তাহলে মেলা থেকে রাজস্ব আহরণের উপর কেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না? আর যেহেতু উৎসব আয়োজকরা এমন ব্যবস্থাই সমর্থন করছেন তখন বিষয়টি তো প্রশাসনের জন্য সহজ হয়ে গেল। একটি বড় মেলা থেকে আহরিত রাজস্বের ব্যাপারে সুষ্ঠু হিসাব নিকাশ এবং এর বণ্টনে নির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা থাকবে না এমনটি কখনও প্রত্যাশিত নয়। এই জায়গায় অবশ্যই ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। আমরা আশা করি স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন এবং একটি ভালো ব্যবস্থাপনার আওতায় মেলা পরিচালনার সুযোগ করে দিবেন।