পাগনার হাওরের খাল খনন কাজ/ যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়

বৃহত্তর পাগনার হাওরে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ১১ হাজার হেক্টর। জামালগঞ্জ উপজেলার বৃহত্তর এই হাওরের কানাইখালি, গজারিয়া ও কালীবাড়ি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় হাওরের ৬০ ভাগের বেশি জমি আবাদের বাইরে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এতে সংশ্লিষ্ট কৃষিজীবী পরিবারগুলোর দুর্দশা বেড়েছে । কৃষকদের ক্রমাগত দাবির মুখে সরকার সম্প্রতি এই তিন খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছেন। খননের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মূল ঠিকাদার সাবঠিকাদার নিয়োগ করেছেন আরেক ব্যক্তিকে। সাবঠিকাদার আবার আরও তিন ঠিকাদারকে কাজে লাগিয়েছেন। এভাবে হাত বদল হতে হতে সর্বশেষ ঠিকাদার মাত্র দুইটি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেছেন গত ১৩ জানুয়ারি। এই খনন কাজের জন্য সরকার ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন মাত্র ২টি এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে সামনের বর্ষা মৌসুমের আগে খাল তিনটির খনন কাজ কোনোভাবেই শেষ হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কার্যত তা হবে বলে কেউই নিশ্চিত হতে পারছেন না। একটি বড় হাওরের দুঃখ ঘুচানোর জন্য সরকারি প্রচেষ্টাকে ঠিকাদাররা কোনোভাবেই ভেস্তে দিতে পারেন না। তাই এ বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।
পাগনার হাওরের এই দুর্দশা বহু যুগের পুরনো। হাওর ও খালে ক্রমাগত পলি পড়ে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। শুরু থেকে হাওরের সমস্যা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দিন দিন বেড়েছে সংকট। ঘনীভূত সংকটের এই পর্যায়ে এসে যে আশার আলো দেখার সূচনা ঘটলো তা এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলো। সেই হাসি যাতে পুনরায় মিলিয়ে না যায় সেটা দেখা সকলের দায়িত্ব বটে। ঠিকাদারদের মাধ্যমে সরকারি কাজ বাস্তবায়ন করার বিধিসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে যেয়ে প্রায়শই আমরা দেখি ঠিকাদারদের অন্যায় আচরণের ফলে সংশ্লিষ্ট কাজটি আটকে থাকে। পরে ঠিকাদাররা নানা তালবাহানা করে ব্যয় বাড়িয়ে তুলেন। আবার ক্ষেত্রবিশেষে প্রাক্কলন মোতাবেক সঠিকভাবে পুরো কাজ না করেই টাকা তুলে নিতে সক্ষম হন। ঠিকাদারদের দাপুটেপনার কারণে বহু জনহিতকর প্রকল্প থেকে যে সুফল প্রত্যাশিত ছিলো তা অর্জন না করার দুঃখজনক বাস্তবতা দেখে আমরা অভ্যস্ত। ঘর পুড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। আমাদেরও সেই অবস্থা হয়েছে। এই ক্ষমতাধর ঠিকাদাররা জড়িত জনগোষ্ঠীর আর্তির কথা উপলব্ধি করে না। তারা ¯্রফে বাণিজ্য করতে আসে। বাণিজ্য করার কারণে যত ধরনের কৌশল আছে তার সবই তারা প্রয়োগ করে মুনাফার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য। মাঝখান থেকে তিরোহিত হয় মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা।
পাগনার হাওরের আবাদযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে খাল খননের পুরো বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দ্রুত শেষ করার জন্য আমরা ঠিকাদারদের সবিনয়ে অনুরোধ জানাই। পাউবোকে নিয়মিত তদারকি এবং মান নিশ্চিত করতে কঠোর হওয়ার আহ্বান আমাদের। জনগণের টাকা দিয়ে ঠিকাদারকে জামাই আদর করার অভ্যাস থেকে ফিরে আসতে হবে। নতুবা সময়মত সঠিক মানের কাজ আদায় করা সম্ভব হবে না। মনে রাখা দরকার পাগনার হাওরের ১১ হাজার হেক্টর জমির শতকরা ৬০ ভাগ যা এখন অনাবাদী থাকছে সেই জমিকে আবাদযোগ্য করা গেলে কী বিপুল পরিমাণ ধানের উৎপাদন হবে। এই উৎপাদন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও আসন্ন খাদ্যসংকটের দুশ্চিন্তাকে কিছুটা হলেও কমাতে সমর্থ হবে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও গণমুখী জায়গা থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। এবার তো এই অনাবাদী জমি চাষের কোনো সুযোগ নেই। আগামী মৌসুমে এই হাওরের সবুজ-সোনালী সৌন্দর্য ও কৃষকদের তৃপ্ত হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়ব দেখতে চাই আমরা।